মামলায় গ্রেপ্তার ৫, তদন্ত কমিটি গঠন

মামলার বাদী আবদুল ওয়াহাব সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার ইনাতনগর গ্রামের বাসিন্দা। ট্রলারডুবির ঘটনায় তিনি বেঁচে গেলেও তাঁর স্ত্রী লুৎফুন্নাহার (৩২) ও ছেলে ইয়াসিনের (২) মৃত্যু হয়। আর মেয়ে মনিরা আক্তার (৫) নিখোঁজ আছে।

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় বুধবার সকালে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার রাজনগর গ্রামের গুমাই নদে যাত্রীবাহী ট্রলারডুবির ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে আবদুল ওয়াহাব (৪০) নামে ট্রলারের যাত্রী বাদী হয়ে কলমাকান্দা থানায় মামলাটি করেন। এতে যাত্রীবাহী ট্রলারের চালক সোহাগ মিয়াসহ (৩৫) ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে। পরে তাঁদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।


এদিকে ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বুধবার রাতে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই কমিটি গঠন করা হয়।  

গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন বাল্কহেডের (পণ্যবাহী বড় নৌকা) মালিক সেলিম মিয়ার ছেলে বাপন মিয়া (৩২), বাল্কহেডের চালক আবাল মিয়া (৩৫) ও সোহাগ রহমান (৩০), চালকের সহযোগী জাফর মিয়া (২৮) ও বাবুর্চি বাদল মিয়া (৩০)। তাঁদের সবার বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায়। আর দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটির চালক সোহাগ মিয়ার বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দার চেমটি গ্রামে।

আরও পড়ুন

মামলার বাদী আবদুল ওয়াহাব সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার ইনাতনগর গ্রামের বাসিন্দা। ট্রলারডুবির ঘটনায় তিনি বেঁচে গেলেও তাঁর স্ত্রী লুৎফুন্নাহার (৩২) ও ছেলে ইয়াসিনের (২) মৃত্যু হয়। আর মেয়ে মনিরা আক্তার (৫) নিখোঁজ আছে। নিখোঁজদের উদ্ধারের বিষয়ে নেত্রকোনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বলেন, ‘ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের ডুবুরি দল এসে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো নিখোঁজ আটজনের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।’

কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল করিম প্রথম আলোকে বিকেল পাঁচটার দিকে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আবদুল ওয়াহাব বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। আমরা ইতিমধ্যে পাঁচজনকে আটক করেছি। আটক ব্যক্তিদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হবে। আর ট্রলারের চালক সোহাগ মিয়াকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।’


নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন, কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল করিম ও কলমাকান্দা ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম। কমিটির প্রধান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির কাজ শুরু হয়ে গেছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের ডুবুরি দল এসে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো নিখোঁজ আটজনের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
আকবর আলী মুন্সী, নেত্রকোনার পুলিশ সুপার

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার মধ্যনগর এলাকা থেকে বুধবার সকালে ৩০-৩৫ জন যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার নেত্রকোনার ঠাকুরাকোনার উদ্দেশে রওনা হয়। সকাল পৌনে ১০টার দিকে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার রাজনগর গ্রাম লাগোয়া গুমাই নদে যাত্রীবাহী ট্রলারের সঙ্গে বালুবাহী ট্রলারের সংঘর্ষ হয়। এতে শিশুসহ ১০ জনের প্রাণহানি হয়। এখনো নিখোঁজ আছেন আটজন। মৃত ১০ জনের মধ্যে নয়জনের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায়। অপরজনের বাড়ি নেত্রকোনার সদর উপজেলার মেদনী গ্রামে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ নিহতদের স্বজনদের ২০ হাজার করে টাকা ও শুকনো খাবার দেন। নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান নিহতদের পরিবারপ্রতি ১০ হাজার টাকা দেন।