ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধ মেটালেন ডিসি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ফাইল ছবি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর ছেলেকে মারধর করে মামলা দেওয়ার ঘটনায় চলমান উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) দুই পক্ষকে ডেকে আজ সোমবার হাত মিলিয়ে দিয়েছেন। আর দুই পক্ষের দায়ের করা মামলা দুটি নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আজ সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী সার্কিট হাউসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বসেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। সেখানে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলীও ছিলেন। তাঁদের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত ইন্টার্ন চিকিৎসক শোভন সাহা ও আবদুর রহিমের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক আলীর হাত মিলিয়ে দেন।

এরপর মুক্তিযোদ্ধারা নগরের রেলগেট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে পূর্বঘোষিত সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে রাজশাহী মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল মান্নান বলেন, উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দিলেন জেলা প্রশাসক। সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা ক্ষমা চেয়েছেন। মামলার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমরা বলেছি, মামলা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে পারব না। তখন প্রশাসন বলেছে, মামলা তারা দেখবে।’

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধকালীন গেরিলা কমান্ডার শফিকুর রহমান রাজা, কবিকুঞ্জের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক, মুস্তাফিজুর রহমান খান, রবিউল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষেরই কিছু না কিছু ভুল–বোঝাবুঝি ছিল। সেটার জন্য তাঁদের হাত মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা ছিলেন। তাঁদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে সেগুলো যেন শেষ করে দেওয়া হয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর সন্তানকে মারধরের ঘটনায় দুই ইন্টার্ন চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
ছবি: প্রথম আলো

ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনন কান্তি দাস প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে ওই মুক্তিযোদ্ধার উদ্দেশে জেলা প্রশাসক বলেছেন, তাঁরা যদি ভুল করেও থাকেন, ক্ষমা করে দিন। তখন দুই পক্ষই হাতে হাত মিলিয়ে মিলমিশ করে নিয়েছে।

২ সেপ্টেম্বর সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক আলীর স্ত্রী পারুল বেগমের (৬৫) মৃত্যু হয়। ইসহাক আলীর পরিবারের অভিযোগ, রোগীর মৃত্যুর পরে চিৎকার করে কান্নাকাটি ও নার্সদের বকাঝকা করার কারণে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা বাবা ও ছেলেকে মারধর করেন। ছেলেকে পুলিশে দেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ৫ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন করেন রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধারা। ওই দিনই ইসহাক আলী দুই ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। গতকাল রোববার ইন্টার্ন চিকিৎসকদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। এ দিন মুক্তিযোদ্ধারাও জেলা প্রশাসককে একটি স্মারকলিপি দেন।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। অনিয়ম-দুর্নীতি আড়াল করার জন্য তারা হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশ করতে দেয় না। একটি বিষয় মীমাংসা হলেও তাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আছে। সেগুলো নিয়ে আন্দোলন চলবে।

আরও পড়ুন