লালমাই পাহাড় কাটায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বড় ধর্মপুর এলাকার সড়ক প্রশস্ত করতে কাটা হয়েছে লালমাই পাহাড়। সম্প্রতি বড় ধর্মপুরে
ছবি: এম সাদেক

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলায় লালমাই পাহাড় কাটায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড ও হক এন্টারপ্রাইজ জেভিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ওই টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আজ মঙ্গলবার পরিবেশ অধিদপ্তর চট্রগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইনের দপ্তরে পাহাড় কাটার অভিযোগের শুনানি শেষে এই জরিমানা করা হয়। সাত কার্যদিবসের মধ্যে জরিমানার অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী মামলা দায়ের/আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্রগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় কাটার কারণে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা জমা দিতে হবে।

কুমিল্লার ঐতিহ্য লালমাই পাহাড় কাটার ঘটনা নিয়ে আজ আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় ‘রাস্তা বাড়াতে লালমাই পাহাড়ে কোপ’ শীর্ষক এক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর ও সওজ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার পিপুলিয়া থেকে লোলবাড়িয়া, রতনপুর হয়ে চন্ডিমুড়া মগবাড়ি পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৯০ কিলোমিটার সড়কের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। কাজটি যৌথভাবে করছে হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড ও হক এন্টারপ্রাইজ জেভি। তাঁরা সড়ক সম্প্রসারণ করতে গিয়ে বড় ধর্মপুর এলাকায় বিনা অনুমতিতে পাহাড় কাটে। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লার উপপরিচালক শওকত আরা কলি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এতে তিনি লালমাই পাহাড়ের ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৩০ ঘনফুট মাটি কাটার বিষয়ে নিশ্চিত হন।

এরপর তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্রগ্রাম অঞ্চলের পরিচালকের কাছে ১১ নভেম্বর এক প্রতিবেদন দেন। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্রগ্রাম অঞ্চল গত ২৮ ডিসেম্বর শুনানির জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে উপস্থিত হওয়ার জন্য চিঠি দেয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে সময় চায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ শুনানির দিন ধার্য ছিল।

এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কুমিল্লার আইনজীবী মো. রফিকুল ইসলাম, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কুমিল্লার নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ এবং প্রসিকিউশন পক্ষে চট্টগ্রাম অঞ্চল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শ্রীরূপ মজুমদার অংশ নেন। শুনানিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আইনজীবী মো. রফিকুল ইসলাম পুনরায় সময় চেয়ে আবেদন করেন। সময়ের আবেদনের যৌক্তিক প্রেক্ষাপট না থাকায় সেটি মঞ্জুর করেনি পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নথি থেকে জানা গেছে, শুনানিতে আইনজীবী রফিকুল ইসলাম স্বীকার করেন, অনুমোদন ব্যতীত অবৈধভাবে সরকারি পাহাড় কর্তন করে প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন, পাহাড়ের যে পরিমাণ মাটি কাটা হয়েছে বলে দাবি করা হয়, আসলে তত পরিমাণ কাটা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রথমবারের মতো হওয়ায় ক্ষতিপূরণ কম করার অনুরোধ করেন।

শুনানিতে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ বলেন, অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাঁদের অজান্তে পাহাড় কেটেছে এবং প্রকৌশল বিভাগকে অবহিত করেনি।

আরও পড়ুন