শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি

অধ্যাপক সেলিম হোসাইনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের দাবিতে শিক্ষকেরা আজ বৃহস্পতিবার সমাবেশ করেন। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বার বাংলা ভাস্কর্যের পাদদেশে
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক সেলিম হোসাইনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। কিছু শিক্ষার্থীর মানসিক নিপীড়নের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে ঘটনায় জড়িত ছাত্রদের বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষকেরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তাঁরা শরীরে কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বার বাংলা ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষকেরা।

প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষকেরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত শিক্ষকেরা সব শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন বলে ঘোষণা দেন। এ ছাড়া শিক্ষকেরা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকারের কাছে দাবি তোলেন।

প্রতিবাদ সমাবেশে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক পল্লব কুমার চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষকদের সভায় প্রতিটি দাবির বিষয়ে আমরা একসঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সবাই বলেছি, এটা একটা হত্যা। হত্যাকারীরা যতক্ষণ ক্যাম্পাসে থাকবে, ততক্ষণ আমরা কোনো অবস্থাতেই ক্লাসে ফিরে যাব না। আমাদের আর কোনো চাওয়া নেই। আমাদের সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ দিতে হবে।’

শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, শিক্ষকেরা তাঁদের শঙ্কার কথা, নিরাপত্তাহীনতার কথা বলছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুস্পষ্ট দাবি, সব শিক্ষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শিবেন্দ্র শেখর শিকদার বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য আমাদেরই কিছু দুষ্টু প্রকৃতির ছাত্র দায়ী। দিনের প্রথম দিকের একাডেমিক কার্যক্রম সেরে সেলিম লাঞ্চের জন্য তাঁর বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। রাস্তা থেকে অনেকগুলো ছাত্র তাঁকে আবারও তাঁর কক্ষে নিয়ে আসে। ভিডিও ফুটেজে তা প্রমাণিত। যে রুমে পাঁচ-ছয়জনের বেশি অবস্থান করাটাই কষ্টসাধ্য, সেখানে ৩৫- ৪০ জন শিক্ষার্থীর একযোগে প্রবেশ করাটা স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। রুমের মধ্যে যে মানসিক টর্চার করা হয়েছে, সেটা অধ্যাপক সেলিমের মতো নিরীহ একটা মানুষ সহ্য করতে পারেননি। তিনি বাসায় ফিরে স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গেও কথা বলতে পারেননি। বাথরুমে গিয়ে স্ট্রোক করেছেন। দোষীদের বহিষ্কার করে তদন্ত করে বিচার করা হোক।’

এ বিষয়ে বেলা দেড়টার দিকে উপাচার্য কাজী সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, আজ বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সেলিম হোসাইন ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলেন। গত মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে তিনি মারা যান। ওই রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রামে নিজ বাড়িতে তাঁকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

তদন্তের আগে ব্যবস্থা না নেওয়ার দাবি ছাত্রলীগের
এদিকে আজ সকাল থেকে প্রশাসন ভবনের ভেতরে শিক্ষক সেলিম হোসাইনের মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অবস্থান নেয়। দুপুরের পর তাঁরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান বলেন, ‘আমাদের কিছু দাবির কথা স্যারকে জানিয়েছি। শিক্ষকদের সংগঠন আনুষ্ঠানিক সভার মাধ্যমে কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়া শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে। এর দ্বারা বিচারের নিরপেক্ষতা লঙ্ঘিত হয়েছে। ঘটনার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধির সমন্বয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। যেখানে কুয়েটের কোনো শিক্ষক প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগপর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা যাতে না নেয়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’

আরও পড়ুন