শীত–বর্ষাতেও এখন শান্তিতে ঘুমাবেন বৃদ্ধ দম্পতি

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে নির্মাণ করা ঘরের চাবি বুঝে নিচ্ছেন ইসমাইল হোসেন-মোমেনা বেগম দম্পতি। আজ বৃহস্পতিবার রংপুরের পীরগাছা উপজেলার মাকসুদখাঁ গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

পলিথিন, চট আর বাঁশের বেড়া দেওয়া একটা ঘর ছিল সত্তরোর্ধ্ব ইসমাইলের। বর্ষার বৃষ্টি আর শীতের কুশায়ার কারণে সেই ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে প্রায় এক দশক ধরে অনেক বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন তিনি। এবারের বর্ষায় আর কষ্ট করতে হবে না বৃদ্ধ ইসমাইলকে। পলিথিন, চটের বদলে মেঝে, গোড়া পাকাসহ একটি নতুন টিনসেড ঘর পেয়েছেন ইসমাইল।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ি ইউনিয়নে দেবী চৌধুরাণীর জন্মভূমি মকসুদখাঁ গ্রামে ইসমাইল হোসেনের (৭৩) বাড়ি। তাঁদের কষ্টের কথা জানতে পেরে প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ও সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক পারভীন হাসানের সহযোগিতায় এই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন পীরগাছার নাসরুল মামুদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক এমাদ উদ্দিন আহম্মেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দীন কমিটি ও মানবসেবা সংঘ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম এ মতিন সরকার, পীরগাছা চৌধুরাণী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ, পীরগাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম খোরশেদ আলম, দেবী চৌধুরাণী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের সভাপতি শাহ শাহেদ ফারুক, প্রথম আলোর বদরগঞ্জ প্রতিনিধি আলতাফ হোসেন ও তারাগঞ্জ প্রতিনিধি রহিদুল ইসলাম মিয়া।

‘বাবা, মোর একটা ঘর দরকার’ শিরোনামে অসুস্থ অসহায় ইসমাইল হোসেনের আকুতির কথা গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম আলো অনলাইনে। তখন অনেকেই তাঁর বাড়িতে গিয়ে শুকনা খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।

নতুন ঘরের সামনে ইসমাইল হোসেন-মোমেনা বেগম
ছবি: প্রথম আলো

আজ নতুন ঘরের চাবি হাতে নিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন ইসমাইল হোসেন। চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘৮-১০ বছর থাকি ভাঙা ঘরোত বুড়াবুড়ি আছনো খুব কষ্ট করি। ঠান্ডাত টপটপ করি শীতোত পানি পড়ছিল, ঘুমবার পারি নাই। বাইসসাত (বর্ষায়) ঘরোত থাইকপের পারি নেই। মেম্বার–চেয়ারমেনের পাছোত কত ঘুরছি, কাঁয়ো মোক একটা ঘর বানে দেয় নাই। ভাবছিনু এই ভাঙ্গা ঘরোত থাকিয়াই বুঝি কবরোত যাবার নাগবে।’ ঘর পাওয়ার আনন্দ প্রকাশ করে ইসমাইল বলেন, ‘এ্যালা নয়া চকচকা ঘর পায়া মনে হওচে মুই স্বপন (স্বপ্ন) দেকোচে। জায় (যিনি) মোক নয়া ঘর বানে দিছে, তার বিনিময়ে আল্লাহ যোন তাক জান্নাতে একটা ঘর বানে দেয়। হামরা বুড়াবুড়ি সারাজেবন ওই ঘরোত শান্তিত থাকিয়া দোয়া করমো।’

বৃদ্ধা মমিনা বেগম (৬৮) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মোর বাপ–মাও যেটা করি দিবার পারে নাই, সেইটা তোমরা করি দেনেন। আল্লাহ তোমার ভালো করবে বাবা।’

ইসমাইল হোসেনের ভাতিজা আবু বক্কর বলেন, চোখের সামনে চাচা-চাচিকে ভাঙা ঘরে দুরাবস্থায় থাকা দেখতে ভালো লাগত না। কিন্তু নিজের সামর্থ্য না থাকায় তাঁদের জন্য কিছু করতে পারেননি। প্রথম আলো নতুন ঘর করে দেওয়ায় তাঁদের বাকি জীবনটা ভালো কাটবে।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এমাদউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘গৃহহীন অসহায় দম্পতিকে মাথা গোঁজার জন্য প্রথম আলো ট্রাস্ট যে ঘরটি করে দিয়েছে, এ জন্য সাধুবাদ জানাই। বস্তুনিষ্ট খবর ছাপানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে যাচ্ছে প্রথম আলো। এ জন্য প্রথম আলো পাঠকের আস্থা অর্জন করে শীর্ষে পৌঁছেছে। আশা করি, বস্তুনিষ্ট খবর প্রচারে এবং সামাজিক কাজ করে অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রথম আলো আগামীতেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে।’

আরও পড়ুন