সাংসদের বিরুদ্ধে জমি দখলচেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা

বরিশাল জেলার মানচিত্র

বরিশালের বানারীপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বসতবাড়ি ও জমি দখলচেষ্টার অভিযোগে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে মামলা হয়েছে। স্থানীয় কৃষক রতন ঘরামীর করা মামলার বিবরণে সাংসদ মো. শাহে আলমের নাম থাকলেও সরাসরি আসামি হিসেবে তাঁর নাম নেই।

এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ নেতা ও বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সাংসদ শাহে আলমের বিরুদ্ধে জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ আনে সংখ্যালঘু কয়েকটি পরিবার। সেখানে মামলার বাদী রতন ঘরামীও ছিলেন। তিনি বানারীপাড়া উপজেলার উদয়কাঠী ইউনিয়নের পশ্চিম তেতলা গ্রামের বাসিন্দা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রতন ঘরামী বাদী হয়ে বরিশালের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন বলে নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মজিবর রহমান। তিনি বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক মো. জহির উদ্দিন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে মামলার এজাহারে সাংসদের নাম সরাসরি আসামি হিসেবে উল্লেখ না থাকলেও ঘটনার বিবরণে তাঁর নাম আছে।

মামলার আসামিরা হলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহিম ব্যাপারী, সাংসদ (বরিশাল-২ আসন) শাহে আলমের ব্যক্তিগত কর্মচারী আল আমিন, তাঁদের সহযোগী তুহিন গাজী ও ইলিয়াস খান।

মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ১৫ দিন আগে আনুমানিক রাত ৮টার দিকে সাংসদ শাহে আলম তাঁর বাসায় রতন ঘরামীকে ডেকে পাঠান। সেখানে গেলে, তাঁকে প্রজেক্ট (পোলট্রি খামার) করার কথা জানিয়ে তাঁর ১৫ কাঠা জমি লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ওই প্রস্তাব শুনে বাদী উত্তর না দিয়ে চলে আসেন। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি রাত ১১টায় সাংসদ শাহে আলমের ব্যক্তিগত কর্মচারী (ম্যানেজার) আল আমিনসহ মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা রতনের বসতঘরে প্রবেশ করেন। তাঁরা ১৫ কাঠা জমি সাংসদের নামে লিখে দিতে চাপ দেন। লিখে না দিলে দেশে বসবাস করতে পারবেন না বলে হুমকি দেন।

মামলায় বাদী আরও উল্লেখ করেন, আসামিদের সঙ্গে থাকা দা ও চাকু দিয়ে প্রাণনাশ ও একের পর এক মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় বাদী চিৎকার দিলে স্বজনেরা পুলিশের জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে রাত ২টা ২০ মিনিটে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। এ সময় মামলার আসামি তুহিন গাজী ও ইলিয়াস খানকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। কিন্তু পরের দিন তাঁদের থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গত ছয় মাস ধরে আসামিরা বাদীকে ভয়ভীতি ও নানাভাবে হয়রানি করছেন বলেও মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মজিবর রহমান বলেন, দণ্ডবিধি ৩৪২, ৩৮৭, ৩৮৯ ধারায় দায়ের করা এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা করেছেন বাদী।
এদিকে মামলার বাদী রতন ঘরামী বলেন, সাংসদের নির্দেশে তিনিসহ ১২টি হিন্দু পরিবারের ওপর অত্যাচার ও জমি দখলচেষ্টার প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিরাপত্তার পাশাপাশি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। গতকাল থানায় এ ব্যাপারে মামলা করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি।’

আরও পড়ুন

এসব অভিযোগের বিষয়ে সাংসদ শাহে আলম গত মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে বানারীপাড়া আওয়ামী লীগের কিছু নেতা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তাঁদের ইন্ধনে এসব হচ্ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ষড়যন্ত্রকারীরা তত সক্রিয় হচ্ছেন। আমি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি, তা দলের একটি মহলের সহ্য হচ্ছে না। তাঁরা কাল্পনিক অভিযোগ তুলে আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’

জমি দখলচেষ্টা প্রসঙ্গে সাংসদের দাবি, রতন ঘরামী ৭৮ শতাংশ জায়গা বিক্রির জন্য তাঁর বাসায় এসেছিলেন। তখন তাঁরা জানান, ৬ লাখ টাকায় ৭৮ শতাংশ জায়গা কিনেছেন, এখন ১২ লাখ টাকা চান। সাংসদ দুই লাখ টাকা বাড়িয়েও দিতে চেয়েছিলেন। রতন এরপর ১০-১১ হাজার টাকাও নিয়েছেন। পরে কাগজপত্র উঠিয়ে দেখেন রতনের নামে জায়গা আছে মাত্র ৩২ শতাংশ। তখন তিনি স্বজনদের মানা করেন ওই জায়গা না কিনতে।