সালথায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রামগুলো পুরুষশূন্য
ফরিদপুরের সালথায় ৫ এপ্রিল নজিরবিহীন সহিংসতার ঘটনায় মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রাম এখন পুরুষশূন্য অবস্থায় আছে। ঘটনায় জড়িত অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। আবার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেই, কিন্তু পুলিশের হয়রানির শিকার হতে পারেন, এমন আশঙ্কায় অনেকে পালিয়ে আছেন।
উপজেলার সোনাপুর, ভাওয়াল ও রামকান্তুপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামের চিত্র এখন এমন। এসব গ্রামের অনেককে সহিংসতার ঘটনায় করা মামলায় আসমি করা হয়েছে। প্রতিদিনই পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। ওই সব গ্রামের হাটবাজার, মাঠ, বাড়িঘরগুলোতে নারী আর শিশু ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। নারী–শিশুদের চোখে–মুখে ভয়ের ছাপ। বাইরের মানুষ দেখলেই তাঁরা ভয়ে দৌড়ে সরে যাচ্ছেন।
রামকান্তপুর গ্রামের কৃষক সেকেন্দার আলী খান বলেন, তিনি ফরিদপুর শহরে আছেন। রামকান্তপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি ও জমি। জমিতে পাট রোপণ করা হয়েছে। এখন সেচ দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এলাকায় যেতে না পারায় পাটগাছগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
এলাকার কয়েকজন নারী বলেন, বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। নারীরা বাড়িতে আছেন, তাঁরাই বাজার করছেন। সব মিলিয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।
সোনাপুর ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. খায়রুজ্জামান বলেন, ‘আমি এলাকাবাসীকে নিয়ে বিপদের মধ্যে আছি। ইউনিয়নের গ্রামগুলো পুরুষশূন্য। কেউ কেউ আমাকে ফোন করে বলেন, গ্রামে আসবেন কি না। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে সদুত্তর দিতে পারি না। আসতে বললে যদি তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে; তখন বলবে চেয়ারম্যান ধরিয়ে দিয়েছেন।’
৫ এপ্রিলের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত ২৬১ জনকে ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। ফলে যে কাউকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেন বলে আতঙ্কে আছে।
নগরকান্দা–সালথা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমিনুর রহমান বলেন, যাঁরা সহিংসতায় অংশ নিয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। পুলিশ চায় না কোনো নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হোক। সালথার গ্রামগুলো কার্যত পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশ চাইছে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, যে ভয়াবহ ঘটনা সেদিন সালথায় ঘটেছে, তা স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে।