সিলেটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা সালিসে চাপা দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার ৬
সিলেটের জকিগঞ্জে দশম শ্রেণির ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণ এবং সালিসের মাধ্যমে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এদিকে ওই স্কুলছাত্রী গতকাল শুক্রবার সকালে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলো অনলাইনে ‘স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, সালিস বৈঠকে ধামাচাপার চেষ্টা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়, যা পরদিন শুক্রবার প্রথম আলোর ৬-এর পাতায়ও প্রকাশিত হয়। অনলাইনে সংবাদটি দেখে সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে জকিগঞ্জ থানায় স্কুলছাত্রীকে ডেকে মামলা নেয় পুলিশ। ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী নিজে বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে। মামলা দায়েরের পরপরই বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলা দায়েরের পরপরই বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন জকিগঞ্জের রারাই গ্রামের সালমান আহমদ (২০), ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযুক্ত সেনাপতির চক গ্রামের হেলাল আহমদ, স্থানীয় ইউপি সদস্য সামছুল হক, রারাই গ্রামের হাফিজ খালেদ, একই গ্রামের ফরল মিয়া ও আমলশীদ গ্রামের আবদুস সালাম।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. লুৎফর রহমান বলেন, প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত খবর দেখে সিলেটের এসপি জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দেন। পরে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্তসহ সালিসের মাধ্যমে ধামাচাপায় জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর পরিবার যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে পুলিশ লক্ষ্য রাখছে।
প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত খবর দেখে সিলেটের এসপি জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দেন। পরে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্তসহ সালিসের মাধ্যমে ধামাচাপায় জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
স্কুলছাত্রীর পরিবার জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত মূল ব্যক্তিসহ প্রভাবশালীরা ধরা পড়েছেন। তারা পুলিশের তৎপরতায় সন্তুষ্ট।
৫ এপ্রিল রাতে জকিগঞ্জের রারাই গ্রামের ওই স্কুলপড়ুয়া ছাত্রী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে গেলে আসামি সালমান আহমদসহ কয়েকজন মিলে তাকে অপহরণ করেন। পরদিন ভোরে স্কুলছাত্রীকে অচেতন অবস্থায় সালমানের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যান। এ ঘটনার পর স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ছাত্রীর পরিবারকে ঘটনা আপস-নিষ্পত্তি করতে চাপ সৃষ্টি করে সালিস বৈঠক বসান। তবে স্কুলছাত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করানো হয়। এতে বিষয়টি জানাজানি হয়।