সুকুমার বাউলের জন্য ভালোবাসার হাত বাড়ালেন অনেকেই

সুকুমার বাউলের হাতে পরিবারের আট সদস্যের জন্য খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন। আজ সোমবার সকালে উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

করোনাকালে পরিবার নিয়ে কষ্টে থাকা বাউল সুকুমার মহন্তকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যক্তি–উদ্যোগে নগদ সহায়তার পাশাপাশি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুণী এই শিল্পীর হাতে অন্তত এক মাস চলার মতো খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে।

লকডাউনে গানের আসর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম অর্থকষ্টে ভোগা সুকুমার বাউলের পরিবার ও তাঁর গানের দল নিয়ে গত শনিবার প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে ‘ইংকা অবস্থা চলতে থাকলে তো না খ্যায়াই মরা লাগবি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এক দিন আগে শুক্রবার প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ছাপা হয় ‘চাইতেও পারছেন না, ক্ষুধাও সইতে পারছেন না সুকুমার বাউল’ শিরোনামে আলাদা একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন নজরে আসে প্রশাসনসহ প্রথম আলোর পাঠকদের।

‘বলব না গো, আর কোনো দিন ভালোবাসো তুমি মোরে’ গান গেয়ে পরিচিতি পাওয়া সুকুমার বাউলের জন্য ভালোবাসার হাত বাড়িয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার। তিনি লকডাউনে সংসার খরচ চালানোর জন্য সুকুমার বাউলকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। আজ সোমবার প্রথম আলোর প্রতিবেদকের মাধ্যমে তিনি এই অর্থ সুকুমার বাউলের হাতে পৌঁছে দেন।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুকুমার বাউল অনেক জনপ্রিয় ও গুণী একজন বাউলশিল্পী। ইউটিউবে অনেক জনপ্রিয় গান রয়েছে এই সুকুমার বাউলের। করোনার সংক্রমণ এবং লকডাউনে আর্থিক সংকটে পড়ার প্রতিবেদনটি পড়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।’ গুণী এই বাউলশিল্পীর সঙ্গে তিনি ফোনে যোগাযোগ করেন। তাঁর বিনয়ী কথাবার্তা মুগ্ধ করেছে। করোনায় আর্থিক কষ্টে থাকলেও মলিন মুখে সুন্দর করে কুশল বিনিময় করেছেন তিনি। সংসারের আর্থিক দুরবস্থার কথা জেনে তাঁর প্রতি ভালোবাসার উপহার হিসেবে সামান্য অর্থ সহযোগিতা করেছেন।

অন্যদিকে প্রথম আলোর প্রতিবেদন প্রকাশের পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হংকং থেকে একজন বাঙালি ব্যবসায়ী সুকুমার বাউল এবং তাঁর গানের দলের প্রতি আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রকৌশলী পদে কর্মরত একজন বন্ধুর মাধ্যমে হংকং থেকে ওই ব্যবসায়ী সুকুমার বাউলের জন্য গত রোববার ২০ হাজার টাকা অর্থ সহযোগিতা পাঠিয়েছেন।

এ ছাড়া বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারার পক্ষ থেকে দুস্থ এই বাউলশিল্পীকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা পাঠানো হয়েছে। এসিআই মোটরস লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের বগুড়ার পরিবেশক আবু মোত্তালিব মানিক তাঁর ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সুকুমার বাউলকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের কথা জানিয়েছেন।

এদিকে সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন আজ সোমবার সকালে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামে সুকুমার বাউলের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। এ সময় ইউএনও দুস্থ এই বাউলশিল্পীর হাতে পরিবারের আট সদস্যের অন্তত এক মাস চলার মতো ভালোবাসার ডালাভর্তি খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন। এতে ছিল ৫০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি মসুর ডাল, ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ৫ কেজি পেঁয়াজ, ২ কেজি চিনি, ২ কেজি লবণ, ৩০টি ডিম এবং এক হাজার টাকা।

এ সময় অন্যদের মধ্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মাসরুবা রাসেল, লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী ইকবাল কবির এবং সাজেদুর আবেদীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মঞ্চে, বাউল আসরে এবং ইউটিউবে গান গেয়ে সংসার চলে সুকুমার বাউলের। গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে গানের আসর ও রেকর্ডিং বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় নিদারুণ কষ্টের দিন। এ বছরের জানুয়ারিতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও নতুন করে লকডাউনে চরম সংকটে পড়েছেন গান গেয়ে সংসার চালানো এই বাউল।

বছর দুয়েক আগে ‘বলব না গো, আর কোনো দিন ভালোবাসো তুমি মোরে’ গানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। আলোচিত এই গান মাত্র কয়েক মাসে শুধু একটি ইউটিউব চ্যানেলেই দেখা হয় কোটিবার। সেই সময়ে নিভৃতচারী সুকুমার বাউলকে নিয়ে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ প্রথম আলো ছুটির দিনে ‘বলেছিলে গো, ভালোবাসি গো’ শিরোনামে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। এরপর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সুকুমার বাউলের নাম।

আরও পড়ুন