সুখের সংসারে শোকের থাবা

লোহাগড়ায় মধুমতী নদীতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে আবু মুসা রেজওয়ান ও তাঁর ছয় মাস বয়সী ছেলের
ছবি: সংগৃহীত

ছয় মাসের ছেলে আনাসকে নিয়ে সন্ন্যাসী বেশে নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছেন মুসা—নদীতে নিখোঁজ হওয়ার আগের রাতে এমন স্বপ্ন দেখার কথা মুসা স্ত্রীকে বলেছিলেন। সেই স্বপ্নের ঘটনাই সত্যি হলো। এ কথা বলে আর্তনাদ করছিলেন নড়াইলের পুলিশ সদস্য আবু মুসা রেজওয়ানের (২৮) স্ত্রী সাজিয়া খানম (২০)।


মধুমতী নদীতে বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ আবু মুসার লাশ গত রোববার আর ছেলে আনাসের লাশ গতকাল মঙ্গলবার ভেসে ওঠে নদীতে। গতকাল সন্ধ্যায় বাবার লাশের পাশেই আনাসকে দাফন করা হয়েছে।

লোহাগড়ায় স্বামী ও ছেলে হারিয়ে নির্বাক চেয়ে আছেন সাজিয়া। বাঁ পাশে মুসার মা শাহানারা বেগম ছেলের শোকে দুই হাত তুলে আহাজারি করছেন
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল সন্ধ্যায় আবু মুসার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে হতবিহ্বল স্ত্রী সাজিয়া বিছানায় নির্বাক হয়ে আছেন। মাঝেমধ্যে বুক চাপড়াচ্ছেন আর বলছেন, ‘আমার সোনার সংসার, সুখের সংসার সব শেষ হয়ে গেল।’


আবু মুসা গত শুক্রবার বিকেলে তাঁর স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়স্বজন নিয়ে ট্রলারে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনাঘাট এলাকায় মধুমতী নদীতে ঘুরতে বের হন। ঘাটে ফিরে আসার সময় সন্ধ্যায় স্রোতের তোড়ে নির্মাণাধীন কালনা সেতুতে ধাক্কা খায় ট্রলারটি। ওই সময় কোলে থাকা শিশুসহ আবু মুসা ট্রলার থেকে নদীতে পড়ে যান। এরপর থেকে তাঁরা দুজন নিখোঁজ ছিলেন।

আবু মুসা পুলিশ সদর দপ্তরে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের চাচই গ্রামে।

গতকাল সন্ধ্যায় গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা আবু মুসার পাশেই দাফন করা হয়েছে শিশু আনাসকে। আড়াই বছর আগে সাজিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় মুসার। আনাসই তাঁদের একমাত্র সন্তান ছিল। ছয় বছর আগে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয় মা-বাবার একমাত্র ছেলে মুসার। তাঁর দুই বোন আছে। তাঁদের বিয়ে হয়েছে। মুসার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। এখন অবসরে। মা শাহানারা বেগম গৃহিণী।

গত ১৯ আগস্ট ১০ দিনের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন মুসা। গত শনিবার কর্মস্থলে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাই আগের দিন শুক্রবার ছোট বোন রাবেয়ার বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে নদীতে ঘুরতে যান। সেদিনের কথা তুলে ধরে মুসার বোন রাবেয়া আহাজারি করে বলছিলেন, ‘এটিই শেষ খাওয়া হলো আমার সঙ্গে।’

আনাসের দাফন ঘিরে শোকের বাড়িটিতে শত শত মানুষের ভিড় ছিল গতকাল সন্ধ্যায়। মুসার মা, বাবা ও বোনেরা আর্তনাদ করছিলেন। চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না উপস্থিত স্বজনেরা।

মুসার মা শাহানারা বেগম বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমি বেঁচে থাকলাম, আর আমার সামনে থেকে কলিজার ধন চলে গেল। আমি এই শোক সহ্য করব কেমনে?’


মুসার ছোট ভগ্নিপতি মো. শামীমুর রহমান কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘মুসা অমায়িক, ভদ্র, প্রাণোচ্ছল ও আমুদে একজন মানুষ ছিলেন। তাঁদের সংসার ছিল সুখের স্বর্গ। সেখানে এখন শোকের থাবা।’

আরও পড়ুন