সুনামগঞ্জ পৌর মেয়রসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

প্রতীকী ছবি

সুনামগঞ্জে প্রতারণার মাধ্যমে দুই রোহিঙ্গা নাগরিকের পাসপোর্ট করার চেষ্টা মামলায় সুনামগঞ্জ পৌর মেয়রসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আজ বুধবার সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন এবং মামলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।

আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক আশেক সুজা মামুন।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা হলেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র-১) হোসেন আহমদ রাসেল, পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী পিযুষ কান্তি তালুকদার, পৌরসভার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধক ও স্যানিটারি পরিদর্শক মো. সেলিম উদ্দিন এবং সুনামগঞ্জ বারের আইনজীবী কাওসার আলম। তবে এই পাঁচজন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নন। পুলিশ মামলার তদন্তকালে অভিযোগপত্রে তাঁদের নাম যুক্ত করেছে।

রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ প্রদান প্রক্রিয়ায় পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলরসহ ওই কর্মকর্তারা যুক্ত রয়েছেন। পরে আইনজীবী কাওসার আলম সেটি সত্যায়ন করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়ে নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে পাসপোর্ট করতে আসেন দুই রোহিঙ্গা। তাঁদের মধ্যে একজন নারী ছিলেন। তাঁরা টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চার ব্যক্তির সহযোগিতায় সুনামগঞ্জে আসেন। এই চার ব্যক্তি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। ওই দিন সকালে পাসপোর্ট করতে গিয়ে তাঁরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। বিকেলে আবার ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ দিতে পাসপোর্ট কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে দুই রোহিঙ্গা ও তাঁদের সহযোগী চার ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দেন পাসপোর্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

ওই দিনই প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার তেরানগর গ্রামের মো. ফরহাদ আহমদ (৩৬), রামনগর গ্রামের মো. নূর হোসেন (২৩), সুজাতপুর গ্রামের মো. জসিম উদ্দিন (২৪) ও আমির উদ্দিনকে (২৩) আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদার। এর আগে ওই দুই রোহিঙ্গা সুনামগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে স্থানীয় কাউন্সিলর হোসেন আহমদ রাসেলের সুপারিশে পৌরসভা থেকে জন্মসনদ নিয়েছিলেন।

যখন এসব সনদপত্র দেওয়া হয়, তখন আমি ঢাকায় ছিলাম। তখন আমার দায়িত্বে ছিলেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র-১) হোসেন আহমদ রাসেল। তাই রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই আমি যুক্ত নন।
নাদের বখত, মেয়র, সুনামগঞ্জ পৌরসভা

এই মামলায় গত ২১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এতে এজাহারভুক্ত চার আসামি ছাড়াও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকায় সুনামগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হোসেন আহমদ রাসেল, পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী পিযুষ কান্তি তালুকদার, পৌরসভার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধক ও স্যানিটারি পরিদর্শক মো. সেলিম উদ্দিন, পৌরসভার মেয়র নাদের বখত ও সুনামগঞ্জ বারের আইনজীবী কাওসার আলমকে যুক্ত করা হয়।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ প্রদান প্রক্রিয়ায় পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলরসহ ওই কর্মকর্তারা যুক্ত রয়েছেন। পরে আইনজীবী কাওসার আলম সেটি সত্যায়ন করেছেন।

তবে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি শুনেছেন। তবে যে ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে, সে ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যখন এসব সনদপত্র দেওয়া হয়, তখন তিনি ঢাকায় ছিলেন। তখন তাঁর দায়িত্বে ছিলেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র-১) হোসেন আহমদ রাসেল। তাই রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই তিনি যুক্ত নন।