সুনামগঞ্জে পানি বাড়ছে, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

বন্যার পানিতে প্লাবিত সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ছবি: প্রথম আলো

পাহাড়ি ঢল ও থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জের নদীগুলোতে পানির উচ্চতা বাড়ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এ পর্যন্ত ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের মধ্যে প্রশাসন শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছে। বন্যার পানিতে জেলার প্রায় তিন শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হওয়ায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ আছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার ছাতক উপজেলার সদরে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫৩ সেন্টিমিটার ওপরে আছে। সুনামগঞ্জে গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ২১৯ মিলিমিটার। যে কারণে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে সুনামগঞ্জে।

আরও পড়ুন

নতুন করে প্লাবিত এলাকার মধ্যে আছে ছাতকের জাউয়া বাজার, দক্ষিণ খুরমা ও ভাতগাঁও এলাকা। বন্যার পানির বিস্তৃতি বাড়ছে শান্তিগঞ্জ উপজেলাতেও। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ সদরেরও। জেলাটিতে ১৫ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। তবে বেশি আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল। এতে জেলার পাঁচটি উপজেলা প্রথমে বন্যাকবলিত হয়। অন্যান্য উপজেলাতেও পানি বাড়ছে। বন্যাকবলিত উপজেলার মধ্যে জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা আক্রান্ত বেশি। এসব উপজেলায় হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

বন্যার পানির কারণে যোগাযোগব্যবস্থাও বিঘ্নিত হচ্ছে। ছাতক শহর থেকে গোবিন্দগঞ্জ হয়ে সিলেটে যাতায়াত করে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার মানুষজন। কিন্তু বন্যার পানিতে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের হাসনাবাদসহ কয়েকটি স্থান প্লাবিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। একইভাবে জেলার তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের শক্তিয়ারখলা, আনোয়ারপুর, বালিজুরীসহ আরও কয়েকটি স্থান প্লাবিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। ছাতক উপজেলায় ৬টি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে ১১০টি পরিবার। দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে দোয়ারবাজার উপজেলায়।

আরও পড়ুন

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রহমান বলেন, পুরো উপজেলাই বন্যাকবলিত। পানিবন্দী মানুষদের নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অবস্থা বেশি খারাপ। ছাতক পৌর শহরের পুরোটাই প্লাবিত। ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় আজ ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন উপস্থিত থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম তদারকি করেছেন।

দোয়ারাবাজারের ইউএনও দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, তাঁর উপজেলায় সদর ও সুরমা ইউনিয়ন বেশি বন্যাকবলিত। অনেক বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যাকবলিতদের জন্য ৩০ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ৬ লাখ টাকা ও ২ হাজার বস্তা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার অবস্থা বেশি খারাপ। এসব উপজেলায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে। যেভাবে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে, পাহাড়ি ঢল নামছে, তাতে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা আছে। বন্যাপরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন।