সুরমার পানি বিপৎসীমার ওপরে, সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফা বন্যার শঙ্কা

ঢলের পানিতে প্লাবিত সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের বাড়িঘর। সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উজানের ঢলে সড়ক প্লাবিত হওয়ায় তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়ছে। এতে এই তিন উপজেলায় আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির সঙ্গে সুনামগঞ্জের উজানের মেঘালয় থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার সুরমা, যাদুকাটা ও পাটলাই নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে আজ বেলা তিনটায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছে।

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খলা, তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর ও বালিজুড়ী এলাকায় সড়ক প্লাবিত হওয়ায় সোমবার সকাল থেকে তাহিরপুরের সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ও জেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণ ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এই উপজেলার বাদাঘাট দক্ষিণ ও ফতেপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। একইভাবে তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা সুরমা নদীর পানির তীর উপচে শহরের সাহেববাড়ি, নবীনগরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের লালপুর, রাধানগর এলাকায় সড়ক প্লাবিত হয়েছে।

আরও পড়ুন

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, পানি বাড়ছে। উপজেলায় দুটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা আছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় তাহিরপুরে পাহাড়ি ঢল আঘাত হানে বেশি। উজানের ঢলে উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে ঢলের পানি দ্রুত নেমে গেলে সমস্যা হবে না।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে গত ১৩ মে পাঁচটি উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলা আক্রান্ত ছিল বেশি। বন্যায় জেলার সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার অনেক বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও মাছের খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রথম দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার বন্যার আশঙ্কায় মানুষ চিন্তিত। তবে এবার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক আছে।

আরও পড়ুন

সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসমত আলী (৬০) বলেন, ‘বাড়িঘর-রাস্তাঘাট থাকি মাত্র পানি নেমেছে। এখন আবার বন্যা দেখা দিচ্ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে আবারও বাড়িঘরে পানি ঢুকবে। কী করব, কোথায় যাব, এ নিয়ে চিন্তায় আছি।’

পৌর শহরের সাহেববাড়ি এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, সুরমা নদীর পানি এক রাতেই বেড়ে নদীতীরের সড়ক ডুবিয়ে দিয়েছে। আর সামান্য পানি বাড়লেই মানুষের বাড়িঘর, দোকানপাট প্লাবিত হবে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, বৃষ্টি হচ্ছে, সেই সঙ্গে নামছে পাহাড়ি ঢল। এ কারণে পানি বাড়ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আছে। সোমবার বিকেলে জেলা দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির জরুরি সভা হয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন