‘রেল ব্লকেড’ শিথিল করলেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা, সচিবালয়ে প্রতিনিধিদল

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের লোগো

সারা দেশে আজ বৃহস্পতিবার ‘রেল ব্লকেড’ বা রেলপথ অবরোধের কর্মসূচি শিথিল করার কথা জানিয়েছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। ছয় দফা দাবিতে তাঁরা এই কর্মসূচি ডেকেছিলেন।

এক বিশেষ বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। বার্তায় প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে শিক্ষা উপদেষ্টার আহ্বানে আজ কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ বৈঠক করবে বলে জানানো হয়েছে। বৈঠক চলাকালীন ‘রেল ব্লকেড’ কর্মসূচি শিথিল থাকবে বলে জানা তারা ।

বৈঠকের ওপর ভিত্তি করে সারা দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জন্য পরবর্তী কর্মসূচি প্রকাশ করা হবে বলেও জানানো হয়।

দুপুর ১২টার কিছু আগে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে ঢুকেছেন। তাঁরা বলেছেন, শিক্ষা উপদেষ্টা বা তাঁর কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করবেন।

ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সাতরাস্তা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। যান চলাচল বন্ধ রাখার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। গতকাল দুপুরে
ছবি: সাজিদ হোসেন

এদিকে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান কার্যকরী উপদেষ্টা রহমত উল আলম শিহাব আজ সকাল ১০টায় প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা তাঁদের অনুরোধ করেছেন, তাঁর সঙ্গে বৈঠক না করে যেন আর রাজপথে কর্মসূচি পালন করা না হয়। এ জন্য পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজকের রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি আপাতত শিথিল করা হয়েছে।

বেলা ১১টায় শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান বাংলাদেশের প্রধান কার্যকরী উপদেষ্টা রহমত উল আলম শিহাব। সেই পর্যন্ত কর্মসূচি শিথিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী রমজান আলী প্রথম আলোকে বলেন, সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হবে। এই বৈঠক চলাকালীন ও ফলাফল না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি শিথিল থাকবে।

দেশব্যাপী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সিলেটের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা দুপুরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চণ্ডীপুল এলাকা অবরোধ করেন। সিলেট, ১৬ এপ্রিল
ছবি: প্রথম আলো

গত বুধবার রাতে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান খানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

ছয় দফা দাবিতে গতকাল বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সড়ক আটকে রাখায় তীব্র যানজটে পড়ে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। পরে গতকাল ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, আজ সারা দেশে ‘রেল ব্লকেড’ বা রেলপথ অবরোধ করবেন আন্দোলনকারীরা। এখন তাঁরা আজকের কর্মসূচি শিথিল করার ঘোষণা দিলেন।

আরও পড়ুন

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।

তৃতীয়ত, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।

আর ষষ্ঠ দাবি হলো পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস এবং ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন