উপাত্ত সুরক্ষা আইনের নাম পরিবর্তন হচ্ছে

প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের নাম পরিবর্তনের কথা ভাবছে সরকার। নামের আগে ‘ব্যক্তিগত’ শব্দ বসিয়ে নতুন একটি খসড়া করা হয়েছে, যা ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যাচাই–বাছাই কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। সংসদের আগামী অধিবেশনেই আইনটি তোলার সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের উদ্যোগে প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩ তৈরি হচ্ছে। আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সুপারিশ ছিল আইনটিকে নাগরিকবান্ধব করা এবং নামের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা। পাশাপাশি পাশের দেশ ভারতের প্রস্তাবিত বিলটিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খসড়াটি গতকাল সোমবার ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’ নামকরণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যাচাই–বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন মহলের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে খসড়া নিয়ে কাজ চলছে।

ভারত সরকার গত আগস্ট মাসে নতুন করে ‘ডিজিটাল পারসোনাল ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ২০২৩’ নামে আইন পাস করে। আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও ভারতের এই নতুন আইনটিকে বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ এসেছে। কারণ, ভারত ও বাংলাদেশ একই অঞ্চলভুক্ত দেশ এবং আইনগুলো অনেক ক্ষেত্রে কাছাকাছি হওয়ায় ভারতের আইনটি প্রাধান্য পেয়েছে।

উল্লেখ্য, ভারত সরকার সমালোচনার মুখে গত বছরের আগস্টে ‘পারসোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল’ নামের আইনটি তুলে নেয়। এক বছর পর চলতি বছরের আগস্টে ‘ডিজিটাল পারসোনাল ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ২০২৩’ নামে আইন পাস করে।

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো সর্বশেষ খসড়াটির আগের খসড়াটি ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির ওয়েবসাইটে এখনো আছে। যেটির ওপর গতকাল পর্যন্ত মতামত দেওয়ার সুযোগ ছিল।

তবে আইসিটি বিভাগ সূত্র বলছে, মতামত দেওয়ার জন্য পুনরায় কোনো সুযোগ রাখা হবে কি না, সেটা নির্ভর করবে সরকারের ইচ্ছার ওপর। এ ছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ে গেলে তারা যদি মতামত নিতে চায়, সেটা নিতে পারে। পাশাপাশি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও অংশীজনদের মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকবে। আগামী অক্টোবরে সংসদের শেষ অধিবেশনে উপাত্ত সুরক্ষার খসড়াটি তোলা হতে পারে।

আরও পড়ুন

জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও অংশীজনদের আপত্তির মুখে উপাত্ত সুরক্ষা আইনের নতুন খসড়ায় বিভিন্ন ধারা অনেকটা শিথিল করেছে সরকার। এ আইন থেকে ফৌজদারি অপরাধ পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। সাজা হিসেবে রাখা হয়েছে জরিমানা।

প্রস্তাবিত আইনটির নাম পরিবর্তনের সুপারিশ শুরু থেকেই করে এসেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, টিআইবির সুনির্দিষ্ট সুপারিশ ছিল নাম পরিবর্তনের। সরকার যদি সে উদ্যোগ নিয়ে থাকে, তবে তা ইতিবাচক। তবে এখনো কিছু উদ্বেগের বিষয় আছে। খসড়ায় ব্যক্তিগত তথ্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। এ ছাড়া এ আইনের অধীন যে বাংলাদেশ উপাত্ত সুরক্ষা বোর্ড গঠিত হবে, তা সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। সেখানে সরকারই ব্যবহারকারী হবে, আবার বিচারকারীও হবে। এটা স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করে। এই কর্তৃপক্ষ হতে হবে সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে।