ভিআইপিরা সড়কে আইন মানেন না: মন্ত্রী

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
ফাইল ছবি

সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও ভিআইপিরা (অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) অনেক সময় সড়কে নিয়ম মানেন না বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।  সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তায় একটু জট দেখলে মন্ত্রী সাহেব, এমপি সাহেব উনি যেতে পারছেন না, রং সাইডে ঢুকিয়ে দেয়। ভিআইপিরা রং সাইডে যায়। এখন অনেকটা কমেছে। অনেক বলে–কয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অনেক কমেছে।’

উল্টো দিক দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনি রাজনীতি করেন মানুষের জন্য। মানুষের অসুবিধা করে আপনি রং সাইডে যাবেন, আপনি কী নেতা? কী রাজনীতিবিদ।’

মোটরসাইকেল চালানোর সময় হেলমেট পরা এবং একাধিক যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা মানা হচ্ছে না। তরুণেরা মোটরসাইকেল চালানোর সময় আইন মানতে চান না। আর রাজনৈতিক তরুণেরা তো মানেনই না। তিনি বলেন, ‘এই ঢাকা শহরে আমি সিগন্যালে লক্ষ করি এক শ মোটরসাইকেলের একটাতেও দুজনের বেশি যাত্রী নেই। সবার হেলমেট আছে। আবার অনেক সময় দেখি তিনজন মোটরসাইকেলে, কারও মাথায়ই হেলমেট নেই। আমি তখন বলি, এরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। রাজনীতি ঠিক না হলে অন্য সবকিছু আমরা ঠিক করতে পারব না। আমাদের আগে ঠিক করতে হবে।’

সড়ক পরিবহন আইন হলেও এর প্রয়োগ ও নীতিমালা প্রণয়ন না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। দ্রুত বিষয়টিতে নজর দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেন তিনি।

ঢাকার গাড়ির দিকে তাকানো যায় না

মালিক-শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাকে বলুন, ঢাকার বাসগুলোর দিকে তাকানো যায়? শেখ হাসিনা দেশকে কোথায় নিয়ে গেছেন, সারা বিশ্বের বিস্ময়। আমাদের গাড়ি দেখলে মনে হয় আমরা গরিব। রংও তো দিতে পারেন। সেই লক্কড়ঝক্কড়। গাড়িতে লেখা “আল্লাহর নামে চলিলাম”। আল্লাহর নামে চলিতে চলিতে আইল্যান্ডে উঠে গেছে। এভাবে চললে তো হবে না।’

দুর্নীতিবাজ থাকতে পারবে না

দুর্নীতিবাজদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ দেশে কিছু লোক আছে, তাঁদের আর কত টাকা, কত সম্পদ দরকার? তাঁরা যদি নেতা হন, সেই নেতা বাংলাদেশে দরকার নাই। শেখ হাসিনার মতো সৎ নেতা চাই।

তাঁর মতো ভালো মানুষ পঁচাত্তর–পরবর্তী আর একজনও আসেনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যারা তাঁর সঙ্গে রাজনীতি করি, কয়জন তাঁকে মেনে চলি? কয়জন জনপ্রতিনিধি জনগণের ভাগ্যোন্ননে কাজ করেন। আর কয়জন পকেটের উন্নয়ন করেন? হিসাব দিতে হবে সকলকে। শেখ হাসিনা একা সৎ থাকবেন, দিনরাত পরিশ্রম করবেন আর আমরা টাকার পেছনে নিজের ভাগ্যোন্নয়নে, পকেটের উন্নয়নে কাজ করব, এটা হয় না।’

নিজের সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি বুকে হাত দিয়ে বলব, পাঁচ বছর ছিলাম প্রতিমন্ত্রী। এবার ১১ বছর হয়ে গেল। কোনো পারসেন্টেজ, কোনো কমিশন কখনো নিইনি। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি। কিন্তু আমার সঙ্গে যারা কাজ করে, এক পশলা বৃষ্টি হলে রাস্তা শেষ। এই রাস্তা করে কী লাভ?’

সড়ক পরিবহন খাতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে হানা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকারের টাকা জনগণের ট্যাক্সের টাকা, এই টাকা যায় কোথায়? সচিক মহোদয়কে বলছি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না। কোথাও দুর্নীতিবাজ থাকতে পারবে না। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করুক। যেখানে দুর্নীতি হবে, সেখানে তদন্ত করতেই হবে।’

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান ও মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান প্রমুখ।