‘বাবা কোথায়, জানতে চাই’

মো. আবদুল আজিজ খানের পাসপোর্ট
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য গত বছরের এপ্রিলে বাড়ি থেকে বের হন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার শ্যামগোপ গ্রামের মো. আবদুল আজিজ খান। গত মে মাসে এজেন্সির প্রতিনিধি (মোয়াল্লেম) পরিবারকে জানান, আজিজ সৌদিতে হারিয়ে গেছেন। অক্টোবরে সৌদি থেকে ফোনে পরিবারকে জানানো হয়, তিনি মারা গেছেন।

আবদুল আজিজের ছেলে মো. আবুল হাসেম খানের ভাষ্য, শিমন ওভারসিজ এক্সপ্রেসের মাধ্যমে ওমরাহ পালনের জন্য তাঁর বাবা প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করেন। তিনি পরিবারকে সেভাবে না জানিয়ে বাড়ি থেকে রওনা হন। তাঁরা ঢাকার হজ ক্যাম্পে, বিমানবন্দরে আবদুল আজিজের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এজেন্সির প্রতিনিধি (মোয়াল্লেম) মো. ইয়াকুব আলী তাঁদের দেখা করিয়ে দেননি। তাঁরা অনেকবার চেষ্টা করেও আবদুল আজিজের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। একপর্যায়ে তাঁর সৌদিতে হারিয়ে যাওয়ার তথ্য জানানো হয়। ছয় মাস পর তাঁর মারা যাওয়ার কথা বলা হয়।

আবুল হাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা আদৌ সৌদি আরবে গেছেন, নাকি যাননি, তা জানি না। তিনি বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত প্রমাণ পাইনি। বাবা কোথায়, জানতে চাই।’

আবুল হাসেম জানান, তাঁর বাবা কৃষক। পাশাপাশি ব্যবসাও আছে। পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য বের হওয়ার পর থেকে তাঁর অবস্থানের বিষয়ে জানার চেষ্টা করে এজেন্সি বা মোয়াল্লেমের কাছ থেকে তাঁরা কোনো সহযোগিতা পাননি। পরে তাঁরা থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু মামলা নেওয়া হয়নি। শেষে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন।

আবুল হাসেমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বরে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওমরাহ শাখা থেকে শিমন ওভারসিজ এক্সপ্রেসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মীর আহম্মদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

নোটিশে বলা হয়, শিমন ওভারসিজ এক্সপ্রেসের মাধ্যমে আবদুল আজিজ ওমরাহ পালন করতে গিয়ে সৌদিতে হারিয়ে যান বলে অভিযোগ। এজেন্সির প্রতিনিধি ইয়াকুবের অবহেলায় তিনি হারিয়ে যান। তাঁকে খুঁজে বের করতে এজেন্সি বা তার প্রতিনিধি কোনো পদক্ষেপ নেননি। পরবর্তী সময়ে সৌদি পুলিশের কাছ থেকে তাঁর মৃত্যুবিষয়ক প্রতিবেদন (ডেথ রিপোর্ট) পাওয়া যায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি গত বছরের ১৬ মে সৌদিতে মারা যান। তাঁর দাফনে বিলম্ব হচ্ছিল। এ জন্য স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন তাঁর দাফনের অনুমতির বিষয়ে সৌদির জেদ্দায় বাংলাদেশ হজ অফিসকে অনুরোধ করে।

মো. আবদুল আজিজ খানের ওমরাহ কার্ড
ছবি: সংগৃহীত

মীর আহম্মদকে দেওয়া নোটিশে আরও বলা হয়, তাঁর এজেন্সির মাধ্যমে আবদুল আজিজ সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গেছেন। তাই ওমরাহ পালন শেষে তাঁর দেশে আসা পর্যন্ত সব দায়িত্ব এজেন্সির। কিন্তু এজেন্সি তা না করে তাঁকে সৌদিতে ফেলে এসেছে। তাঁর হারিয়ে যাওয়ার তথ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেনি এজেন্সি। এ ঘটনায় হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা অনুয়ায়ী কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা মীর আহম্মদকে জানাতে বলা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মীর আহম্মদ প্রথম অলোকে বলেন, ‘আবদুল আজিজ সৌদিতে সেলুন থেকে হারিয়ে যান। কত দিন তাঁকে পাওয়া যায়নি, তা আমার জানা নেই, মোয়াল্লেম জানেন। পরে জেনেছি, তিনি মারা গেছেন। সৌদিতে তাঁর দাফন হয়েছে।’

আবদুল আজিজের ছেলে আবুল হাসেম বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর বাবা বেঁচে আছেন। তিনি যদি মারাই যান, তাহলে তাঁর মৃতদেহ বা কবরের কোনো ছবি-ভিডিও কেন তাঁদের দেখানো হলো না?

ওমরাহ শাখা থেকে দেওয়া নোটিশের জবাব দিয়েছেন মীর আহম্মদ। তবে তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট হননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এখন অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রণালয় শুনানি নিচ্ছে।

মীর আহম্মদ বলেন, শুনানির জন্য ৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে আবার মন্ত্রণালয়ে ডাকা হয়েছে। ওমরা হজ গাইড ইয়াকুব আলীকেও ডাকা হয়েছে। তবে ইয়াকুব সৌদি আরবে আছেন।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মো. মঞ্জুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুল আজিজের ছেলে আবুল হাসেমের করা অভিযোগের বিষয়ে আমরা শুনানি নিচ্ছি। শুনানির মাধ্যমে আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাব। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’