দেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে কেন এত মাতামাতি 

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রায় তলানিতে থাকা এ দেশের মানুষের এখন ফুটবল উন্মাদনা বলতে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা। এদের নিয়ে দুই দলে ভাগ ফুটবলপ্রমীরা। 

বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করেন আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থকেরা। সম্প্রতি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

ফরাসি ফুটবলার এরিক ক্যান্টোনা বলেছিলেন, ‘আপনি আপনার স্ত্রী বদলাতে পারেন, আপনার রাজনীতি বদলাতে পারেন, ধর্মও পাল্টে ফেলতে পারেন। কিন্তু কখনোই আপনার প্রিয় ফুটবল দল পাল্টাতে পারবেন না।’

খেলোয়াড়ি জীবনে খ্যাপাটে এই ফুটবলারের এই কথার সঙ্গে কেউ একমত না–ও হতে পারেন। তবে বিশ্বকাপ শুরু হলে এই ফরাসির কথার যথার্থতা টের পাওয়া যায়৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই আসর চলাকালে নিজেদের দল নিয়ে উন্মাদনায় বুঁদ থাকে ফুটবল–দুনিয়া৷ অন্য সময় সভ্যভব্য থাকা এসব মানুষের মধ্যে যেন অন্য কোনো আত্মা ভর করে। 

গোষ্ঠীতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত দেখা যায় এই বাংলাদেশে। ফুটবল মানচিত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো জায়গা নেই এ দেশের। ফিফার র‍্যাঙ্কিংয়ে অনেকটা তলানিতে (১৯২তম) থাকা এ দেশের কোটি কোটি মানুষ আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল—এই দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। দেশজুড়ে দেখা যায় দুই দেশের পতাকা। দলের প্রতি সমর্থন জানান দিতে অনেকে জার্সি গায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খেলা দেখছেন সে দেশের জার্সি গায়ে দিয়ে। এ দেশে অন্যান্য দেশেরও সমর্থন আছে, তবে সেটা খুবই নগণ্য। চায়ের দোকানে, অফিসে, বাসে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে তুমুল তর্কবিতর্ক আর নিজ দলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা। তবে দুই দলের প্রতি সমর্থন অনেক সময় এতটাই চরমে যায় যে ভাইয়ে–ভাইয়ে, বন্ধুতে–বন্ধুতে তা বিবাদে রূপ নেয়। 

কেন এমন হয়? হাজার হাজার মাইল দূরের দুটি দেশের ফুটবলের জন্য এ দেশের মানুষের উন্মাদনা কেন এমন চরমে পৌঁছায়?

বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের মস্তিষ্ক অন্য প্রাণীদের মতো নয়। অন্য প্রাণীরা প্রকৃতিতে বড়, প্রকৃতি তাদের অনেক কিছু ঠিক করে দেয়। কিন্তু মানুষের মস্তিষ্ক কাদামাটির মতো। একে যেভাবে গড়ে তোলা হয়, সেভাবেই বিকশিত হয়। বড়রা যা করে, সমাজে যেভাবে প্রথা নির্ধারিত হয়, সেগুলোই শিশুর মস্তিষ্কে গেঁথে যায়। 

লাখ লাখ বছর ধরে মানুষ খাদ্য সংগ্রহ ও নিরাপত্তার জন্য দলবদ্ধভাবে থাকত। আর এই দলবদ্ধতা দাঁত-নখ-পাখাহীন মানবজাতিকে কেবল টিকে থাকতেই সহায়তা করেনি, বরং জীবজগতের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণীতে পরিণত করেছে। মানুষ কোনো না কোনোভাবে দলবদ্ধ হয়ে থাকতে চায়। 

আরও পড়ুন

সমর্থনের পেছনে কারণ

সমাজবিজ্ঞানীদের এসব তত্ত্বের আলোকে ধরে নেওয়া হয়, খুব অল্প বয়সেই মানুষ কোনো একটা দল বেছে নেয়। বাকি জীবন সাধারণত সেই দলের প্রতি সে বিশ্বস্ত থাকে। এটাই মানবচরিত্র।

দুনিয়ার নানা প্রান্তে নানা জরিপে দেখা গেছে, মানুষের একটি দলকে সমর্থনের পেছনে বেশ কিছু নিয়ামক কাজ। এর মধ্যে প্রধান স্থানিক যোগাযোগ আর সাফল্য। নিজের মহল্লা কিংবা শহরের দলের প্রতি মানুষের নাড়ির টান থাকে। আর নিজের জাতীয় দলের প্রতি তো সমর্থন থাকেই। আর সফল দলের প্রতি সমর্থন মানবচরিত্রের অংশ। এই দুই বিষয়ের বাইরে আরও কিছু কারণে সমর্থন করতে দেখা যায়৷ যেমন কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে কেউ কেউ একটা দল পছন্দ করে ফেলে। কিংবা দেখা যায়, পরিবারের লোকজন বা পছন্দের কোনো মানুষের প্রভাবে একটি দলের প্রতি ভালোবাসা জন্মে। দলের জার্সি দেখেও সমর্থন করার সংখ্যাও কম না। কোনো একটা খেলা মাঠে গিয়ে বা টিভিতে দেখে যে মুগ্ধতা আর স্মৃতিমেদুরতা জন্ম হয়, তা–ও কাউকে কাউকে আজীবনের জন্য কোনো একটি দলের প্রতি দুর্বল করে দিতে পারে। 

রংপুর টাউন হল মাঠে বড় পর্দায় আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রেলিয়ার খেলা দেখতে হাজারো দর্শকের ভিড়
ছবি: প্রথম আলো

কোনো একটি দলের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়ার অর্থ সারা জীবন সেই দলটিকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া। সমর্থনটা এমন একটা পর্যায়ে যায় যে দলের খারাপ খেলা, এমনকি খেলোয়াড়দের খারাপ আচরণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যুক্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। সব সময় প্রতিপক্ষের দোষ খুঁজে বেড়ায়। অন্ধ সমর্থন ঠান্ডা মাথার নিপাট ভদ্র মানুষকেও হিতাহিত জ্ঞানশূন্য আর যুক্তিহীন করে তোলে। এমনকি সংঘাতের মতো ঘটনারও জন্ম দেয়। দলগত ক্রীড়া মানুষের এই আদিম স্বভাবকে উন্মোচন করে দেয়। 

বোঝা যাচ্ছে, ফুটবল খেলায় বাড়াবাড়ি রকমের সমর্থক হয়ে ওঠা মানুষের চরিত্রেরই অংশ। এখন আমাদের মূল প্রশ্নে ফিরে যাওয়া যাক। বাংলাদেশের মানুষ কেন আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলকে এত উদগ্রভাবে সমর্থন করে?

আরও পড়ুন

উপনিবেশবিরোধী নায়কের স্থান

ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল গত শতকের ষাটের দশকের মধ্যভাগ থেকে। এ অঞ্চলের মানুষ তখন আন্দোলন-সংগ্রামে লিপ্ত। দেশজুড়ে চলছিল মুক্তিসংগ্রামের আবহ।

অন্যদিকে গোটা বিশ্ব বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো তখন উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন স্বপ্ন আর বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষায় উত্তাল। নিজেদের আত্মপরিচয় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে মরিয়া তারা। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো উপনিবেশ ও পশ্চিমাবিরোধী ঢেউয়ে উত্তাল। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, কিউবার সংগ্রাম, ফিদেল কাস্ত্রো আর চে গুয়েভারা তরুণদের কাছে বিপ্লবের দ্যোতনা নিয়ে আসেন। এর প্রভাব শুধু রাজনীতিতে নয়, সংগীত, শিল্পকলা, সাহিত্য আর খেলাধুলায়ও পড়েছিল।

খেলা শুরুর আগেই কানায় কানায় পরিপূর্ণ মুহসীন হলের মাঠ। পতাকা নেড়ে প্রিয় দলকে শুভকামনা জানাচ্ছেন এই ব্রাজিল–ভক্ত
ফাইল ছবি

নায়ক খোঁজাটা মানুষের আরেকটা প্রবৃত্তি, যে নায়ক তাঁদের স্বপ্ন আর আদর্শের জন্য লড়াই করে। ষাটের দশকে পেলে আর ব্রাজিল ফুটবল দল এই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলে যায়। এই দলটি কেবল কালো মানুষ–অধ্যুষিত তৃতীয় বিশ্বের দেশকেই প্রতিনিধিত্ব করত না, এরা বেশ সফলও ছিল। ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে এদের লড়াইকে মানুষ নিজের বলে ভাবত। তাদের ভালোবাসার ‘কালো মানিক’ পেলের জয়কে নিজেদের বিজয় হিসেবে উদ্‌যাপন করত।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। ক্রিকেট–বিশ্বের দাপুটে এই দলটা যেন ছিল ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে এক লড়াকু যোদ্ধা। স্বভাবতই তাঁরা জনগণের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিল। 

বাংলাদেশের মানুষ পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে এবং পরেও ফুটবলপাগল ছিল। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্লাব ফুটবলের খেলা দেখতে সমর্থকদের উপচে পড়া ভিড় থাকত স্টেডিয়ামে। এ কথাও ঠিক, সে সময় আন্তর্জাতিক খেলা উপভোগ করার সুযোগও ছিল খুবই সীমিত। কেবল ধনীরা টেলিভিশন কিংবা ভিডিও ক্যাসেটে খেলা দেখতে পারতেন। কেউ কেউ বেতারে ধারাভাষ্য শুনতেন, সঙ্গে থাকত বিদেশি পত্রিকা। অবশ্য সে সময় দেশের স্থানীয় ক্লাব–সংস্কৃতি ছিল ভীষণ উদ্দীপ্ত। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলাধুলা পছন্দ করা তারুণ্যের পছন্দের দল হয়ে ওঠে ব্রাজিল আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

আশির দশকে দুই ধারা

আশির দশকে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। এ সময় লাতিন আরেক দল আর্জেন্টিনা সাফল্য পেতে থাকে। এই দেশটি শুধু কাপই জয়ী হয়নি, ১৯৮৬ সালে তাদের দেশের হয়ে আবির্ভূত হলো এক ফুটবলদেবতার—ডিয়েগো ম্যারাডোনার। লাতিন আমেরিকার রোমান্টিক লেখকেরা যুগের পর যুগ এমন এক ফুটবল–ঈশ্বরের অপেক্ষায় ছিলেন, যিনি বস্তিতে বেড়ে উঠবেন। শাসকদের বিরুদ্ধে জিতবেন ফুটবল মাঠে। আর মাঠের বাইরে ছড়াবেন বিপ্লবের মন্ত্র। ম্যারাডোনার ঈর্ষণীয় সাফল্য নিমেষেই তাঁকে ফুটবল–দুনিয়ার বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের ফুটবল–পাগল মানুষের মহানায়কে পরিণত করে। 

বাংলাদেশে ব্যাপারটা ছিল আরও দারুণ। তত দিনে স্বাধীন দেশে মানুষের আয়রোজগার কিছুটা বেড়েছে। টেলিভিশন ব্যাপারটা মোটামুটি ছড়িয়েছে প্রান্তিক এলাকায়ও। এ সময় ম্যারাডোনা–জাদুতে বুঁদ ছিল ফুটবলপ্রেমী মানুষ। তাঁর ভক্ত বাড়ে। ব্রাজিলের পাশাপাশি আর্জেন্টিনারও বিপুল সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি হয়।

সত্তরের দশকে ব্রাজিল দলটি উপনিবেশের বিরুদ্ধে তৃতীয় বিশ্বের লড়াইয়ের প্রতীক হলেও বাংলাদেশে তাঁদের সমর্থন ছিল মূলত শিক্ষিত ও অভিজাত শ্রেণির মধ্যে। ফলে এক দশক পরে খোদ ব্রাজিলের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন এই অভিজাতবিরোধিতার উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।

এই বদ্বীপের মানুষের বিদ্রোহী মনোভাবের কথা যুগে যুগে ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। মধ্যযুগে জিয়াউদ্দিন বারানীর মতো লেখক এই অঞ্চলকে বলতেন বুলগামপুর বা বিদ্রোহীদের দেশ। আধুনিক যুগেও এই দ্রোহের গল্পের অগণিত উদাহরণ পাওয়া যায়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয়। 

পুরো বিষয়টি বুঝতে আবার ক্রিকেট ও স্থানীয় ক্লাব–সংস্কৃতির সাহায্য নেওয়া যায়। ক্রিকেটে একটা সময় এই দেশের মানুষ মূলত পাকিস্তান আর ভারতের সমর্থক ছিল। এর পেছনে কারণ ছিল মূলত ধর্মীয় আর ভৌগোলিক। আর কিছু মানুষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সমর্থন দিতেন।

বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটে ভালো করতে শুরু করলে প্রতিবেশী দল দুটির প্রতি এ দেশে সমর্থন কমতে থাকে। ধীরে ধীরে জাতীয় ক্রিকেট দলই বাংলাদেশের মানুষের প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে। অবশ্য আমাদের দলটিকে বিশ্বসেরার কাতারে যেতে এখনো পথ বাকি। 

একই সময় স্থানীয় ক্লাব–সংস্কৃতিতে ধস নামে। দেশীয় ফুটবল জৌলুশ হারাতে থাকে। এতে খেলাপাগল মানুষ একধরনের শূন্যতায় ভোগে। কেউ কেউ ইউরোপীয় ফুটবলের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ইউরোপের ক্লাবগুলোর পক্ষ নিয়ে গলা ফাটায়। তবে এই সংখ্যা তুলনায় অনেক কম। অনেকটাই যেন সত্তর দশকের শুরুর মতোই। 

এ অবস্থায় চার বছর পরপর দেশের ফুটবলপ্রেমী মানুষের উৎসবের উপলক্ষ এনে দেয় বিশ্বকাপ। ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্কটা দৃঢ় হলেও এ দেশের মানুষ ফুটবল ভুলতে পারে না। ম্যারাডোনার কল্যাণে এই উৎসবের পালে আরও হাওয়া লাগে। আর্জেন্টিনার ভক্তরা সুযোগ পায় লড়াইয়ের মঞ্চে মেতে ওঠার। ব্রাজিলীয় ভক্তরাও তেতে ওঠে। মেসির মতো খেলোয়াড়েরা এখনো অবশিষ্ট ইউরোপবিরোধী মানসিকতার উদ্দামকে জ্বালিয়ে রাখে। রোনালদো, কার্লোসরা উসকে দেন ব্রাজিল–ভক্তদের আবেগ। দুই দেশের বাইরে কিছু মানুষকে জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সের মতো দলকে সমর্থন করতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে সেসব দেশের পতাকাও চোখে পড়ে। সংখ্যার বিচারে আসলে তাঁদের ‘ফ্যাশনেবল বিদ্রোহী’ আখ্যা দেওয়া যায়। যারা সব সময় স্রোতের বিপরীতে থাকার মধ্যে আত্মপ্রসাদ লাভ করে। 

আরেকটা নৃতাত্ত্বিক বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার ভক্তদের একটা বড় অংশ কেবল ভক্ত নয়, তাদের মধ্যে কাজ করে বিপক্ষের প্রতি তীব্র ক্ষোভ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার মানুষও আছে এ অঞ্চলে। এ দেশের জাতীয় খেলা কাবাডি। কোনো বাড়তি অনুষঙ্গ (যেমন বল বা ব্যাট কিংবা নেট) ছাড়া এই খেলায় একদল আরেক দলের এলাকা দখল করতে চায়। আর চায় যেকোনো মূল্যে নিজের এলাকা সুরক্ষিত রাখতে। খেলার মাঝখানে যখন এক দলের খেলোয়াড় আরেক দলের খেলোয়াড়কে জাপটে ধরে মাটিতে ফেলে চেপে ধরে, তা দেখে উল্লাস করে দর্শকেরা। শত্রু নিধনের এই খেলা, এই মেলা এই অঞ্চলের গ্রামীণ সমাজের বড়সড় উদ্‌যাপনের উপলক্ষ। এ অঞ্চলের মানুষ আরেকজনকে ভূপাতিত হতে দেখলে আনন্দ পায়। দুই দলে ভাগ হয়ে এই আনন্দ তাঁরা উপভোগ করে। দুই দলে ভাগ হয়ে বিবাদে জড়ানো এই অঞ্চলের ঐতিহ্য। যেটা আমরা দেখছি দেশের রাজনীতিতেও।

এখনকার দিনে ধীরে ধীরে সেই জাতীয় খেলাও সংকুচিত হয়ে আসছে। না আছে কাবাডি খেলার মাঠ, না আছে স্টেডিয়ামে গিয়ে পছন্দের দলকে সমর্থন জানানোর সুযোগ। ফলে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ফুটবল উৎসবকেই বিরাট এক মেলায় পরিণত করেছে মানুষ। যেখানে চলে নানা রকম লড়াই আর তামাশা।

ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা এখানে উপলক্ষমাত্র। যত দিন এখানকার মানুষ নিজেদের দলকে নিয়ে উৎসব করার সুযোগ না পাবে, তত দিন তাঁরা এই মাতামাতি চালিয়েই যাবে।