উপকূলে উঁচু জোয়ারের শঙ্কা

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে থেমে থেমে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলে। জোয়ারে কপোতাক্ষ নদের পানি ফুঁসছে। দশহালিয়া, কয়রা উপজেলা, খুলনা, ২৫ মেছবি: সাদ্দাম হোসেন

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আজ বুধবার সকালে ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওডিশার প্যারাদ্বীপ ও বালেশ্বরের মধ্যবর্তী অংশ দিয়ে দুপুর নাগাদ উপকূল অতিক্রম করবে ঝড়টি। ওই এলাকা বাংলাদেশ ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে। ফলে ঝড়ের প্রান্তভাগ ছুঁয়ে যাবে বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা অংশকে। তবে দেশের উপকূলের অধিকাংশ এলাকাজুড়ে উঁচু জোয়ারের শঙ্কা আছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা গতি পরিবর্তন করায় এর প্রান্তীয় অংশ বাংলাদেশের খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকার ওপর দিয়ে যেতে পারে। ফলে ঝোড়ো হাওয়ার গতি ও জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে।

আজ সকালে আঘাত হানবে ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে। ঝড়ের প্রান্তভাগ ছুঁয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা অংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে ছয় ফুট উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে। দেশের ১৪টি উপকূলীয় জেলা এবং চর ও দ্বীপে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকাসহ রাজধানী পর্যন্ত এর প্রভাব পড়তে পারে।

গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় বুলেটিনে দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজার উপকূলকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ওডিশার বালেশ্বরে সকাল নয়টার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। বেলা একটা থেকে তিনটার মধ্যে এর কেন্দ্রীয় অংশ বা চোখ সেখানে আঘাত করবে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার এক বছরের মাথায় দেশের উপকূলীয় এলাকা আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে শেষ সময়ে উপকূলের দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো মেরামত শুরু হয়েছে। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া গেছে, খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের অনেক জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ও টপকে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকায় জোয়ারের পানি বসতি এলাকা এবং মাছের ঘেরে ঢুকে পড়েছে।

আজ বুধবার সরকারি ছুটি থাকলেও ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত সব সংস্থার সব কর্মকর্তা ও কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমাদের ১৪ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। আর ৬৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে কাজ করছেন।’

এদিকে গতকাল দুপুর থেকে ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনার নিচু এলাকা এবং চরাঞ্চলগুলোতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ টপকে ও ভেঙে ওই পানি প্রবেশ করছে। সুন্দরবনের দুবলার চরসহ জেলেপল্লিগুলোর বেশির ভাগ এলাকা এরই মধ্যে ডুবে গেছে।

দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো থেকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, খুলনার কয়রাসহ কয়েকটি উপজেলায় আগে থেকেই বেড়িবাঁধগুলো ভাঙা ছিল। সেখান দিয়ে এখন বসতি এলাকা এবং মাছের ঘেরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়ছে। ঝোড়ো হাওয়ার কারণে অনেক স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এসব এলাকার অধিবাসীরা নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় প্রশাসন এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো উপকূলবাসীকে নিরাপদ ও উঁচু স্থানে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছে।

এ ব্যাপারে ঘূর্ণিঝড় বিশেষজ্ঞ ও কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশে ব্যাপক পরিমাণে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারে। ফলে নিচু এলাকার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে।

দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলো থেকে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

এ ছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলায় বিমানবাহিনী রেকি মিশন, সার্চ অ্যান্ড রেস্কিউ অপারেশন এবং মানবিক সহায়তার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিমান ও হেলিকপ্টার প্রস্তুত রেখেছে।