
ফরিদপুরবাসীর কাছে দুর্লভ হয়ে উঠেছিল পদ্মফুল। সেই পদ্মে এখন ছেয়ে গেছে শহরের একটি পুকুর।
শহরের ঝিলটুলী মহল্লায় সিভিল সার্জনের সরকারি বাসভবনের এঁদো পুকুরে এখন পদ্মফুল ফুটছে। ফুলে আর পাতায় ভরে গেছে সমস্ত পুকুর। পুকুরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে লাল পদ্মের আভা। যে পুকুরের দিকে একসময় শহরের মানুষ ফিরেও তাকাত না, সেই পুকুরটি এখন হয়ে উঠেছে একটি দর্শনীয় জায়গা।
এতকাল এই শহরের নতুন প্রজন্মের কাছে পদ্মফুল ছিল ছবিতে দেখা একটি ফুলবিশেষ। বই পড়ে জেনেছে পদ্মদিঘি, পদ্মবিলের কথা। আজ সেই ছবির ফুল চলে এসেছে নাগালের মধ্যে। এই পদ্মপুকুর নিয়ে শহরের মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। শহরের ইট-বালুর মধ্যে এমন দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখতে আসছেন অনেকেই।
সিভিল সার্জন অরুণ কান্তি বিশ্বাস বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ফুল ভালোবাসি, বেশি প্রিয় পদ্ম ফুল। গোপালগঞ্জে আমার বাড়ির পাশে বিশাল জলাশয়ে পদ্ম ফুল ফুটত, সেখান থেকেই এই ফুলের প্রতি আমার ভালোবাসার জন্ম হয়। ফরিদপুরে আসার পর এই পুকুরে পদ্ম রোপণ করি। এখন পুকুরজুড়ে ফুটছে শত শত ফুল।’
পদ্ম ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম nelumbo nucifera। পদ্ম (Lotus) Nymphaeaceae গোত্রের ভাসমান জলজ উদ্ভিদ। সারা বছর পানি থাকে এমন জায়গায় পদ্ম ভালো জন্মে। তবে খাল-বিল, হাওর, বাঁওড় ইত্যাদিতেও এ উদ্ভিদ জন্মে। পাতা বড় এবং গোলাকৃতি, কোনো কোনো পাতা পানিতে লেপটে থাকে, কোনোটা উঁচানো। ফুল বৃহৎ এবং বহু পাপড়িযুক্ত। সাধারণত বোঁটার ওপর খাড়া, ৮-১৫ সেন্টিমিটার চওড়া। ফুলের রং লাল, গোলাপি ও সাদা, সুগন্ধিযুক্ত। পুরোনো গাছের কন্দ এবং বীজের সাহায্যে এদের বংশবিস্তার হয়।
গোবরে পদ্ম ফুল, পদ্ম পাতায় জল বাংলা সাহিত্যে বাগ্ধারা হিসেবে বহুল প্রচলিত। পদ্মাসন: একটি যোগাসন। পদ্ম ফুল পবিত্র সৌন্দর্যেরও প্রতীক। যেমন: চরণকমল, পাদপদ্ম, করকমল, মুখপদ্ম ইত্যাদি।
হিন্দু ধর্মে পদ্ম লক্ষ্মী দেবীর আসন। শ্বেতপদ্ম বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আসন। দুর্গা ও লক্ষ্মীপূজায় পদ্ম ফুলের প্রয়োজন হয়।
ফরিদপুরের নিসর্গ সংসদের সদস্য মুজিবর রহমান বলেন, ‘এটি একটি অনুকরণীয় উদ্যোগ। আমাদের শহরে পদ্ম ফুল ছিল না। সিভিল সার্জন তাঁর সরকারি বাড়ির পুকুরে ব্যাপকভাবে পদ্ম ফুলের চাষ করেছেন। আমি আপ্লুত।’