কালবৈশাখী চলবে, মাসের শেষে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘তকতে’ এরই মধ্যে ভারতের মুম্বাই উপকূলে আঘাত হেনেছে। গুজরাট রাজ্যেও এর প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ঝড়ের দাপট না কাটতেই বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে সাগরের পানি অস্বাভাবিক উত্তপ্ত হয়ে আছে। সেখানে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। দ্রুত তা নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তবে এটি বাংলাদেশের উপকূলে, না অন্য কোথাও আঘাত করবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আবহাওয়াবিদেরা। তাঁরা বলছেন, চলতি মাসের বাকি সময়জুড়ে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও কালবৈশাখী ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এরই মধ্যে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে তাপমাত্রা বেড়ে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও রাশিয়ার আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থাগুলো থেকেও বঙ্গোপসাগরে তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের মে মাসের মাসিক আবহাওয়ার পূর্বাভাসে মাসের শেষের দিকে একটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। চার মাস ধরে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এমনিতেই বাংলাদেশ ভূখণ্ড উত্তপ্ত হয়ে আছে।

জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, মে মাসের শেষের দিকে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা প্রবল। তবে সেটি কীভাবে ও কোথায় তৈরি হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। মাসের শেষের দিকে তা বোঝা যাবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, চলতি মাসের বাকি সময়জুড়ে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও কালবৈশাখী ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কয়েকটি স্থানে এরই মধ্যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়ে গেছে। সেটিও অনেকগুলো স্থানে চলবে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাঙামাটিতে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে নেত্রকোনায় ৫০ মিলিমিটার। চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের অনেকগুলো এলাকায় দাবদাহ চলছে। আজ দেশের বেশির ভাগ স্থানে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। অর্থাৎ দাবদাহ আরও বিস্তৃত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এ ধরনের উষ্ণ আবহাওয়া সাগরে লঘুচাপ তৈরির ক্ষেত্রে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক যুগে ঘূর্ণিঝড়গুলোর বেশির ভাগই আঘাত হেনেছে এই মাসে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মে মাসের ঘূর্ণিঝড়গুলো মূলত দেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট উপকূলে আঘাত হানে। আর নভেম্বরের ঝড়গুলো চট্টগ্রাম-নোয়াখালী উপকূলের দিকে বেশি যায়। ওই উপকূলের বড় অংশজুড়ে পাহাড় ও দ্বীপ আছে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উপকূল অপেক্ষাকৃত ঢালু বা নিচু। ফলে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে সেখানে ক্ষতি হয় বেশি।

গত বছর সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এতে দেশের ২৬টি জেলায় আনুমানিক ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়, ফসল নষ্ট হয় ১ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমির, প্রাণ হারান অন্তত ২১ জন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরে সংরক্ষিত ১৯৬০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা ও পরের তিন বছরের ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ে মোট ৩৬টি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে ১৫টি এসেছে মে মাসে। আর গত এক যুগের (২০০৮-২০) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই সময়ে মোট ৯টি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এর মধ্যে সাতটিই হয়েছে মে মাসে। বাকি দুটির একটি জুলাইয়ে, অন্যটি নভেম্বর মাসে হয়েছে।

ঝড় নিয়ে এক যুগ ধরে গবেষণায় যুক্ত কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির গবেষক মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বের ঘূর্ণিঝড়বিষয়ক সব কটি ভূ-উপগ্রহের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি মাসের শেষের দিকে আন্দামানে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। তবে আমাদের আগামী এক সপ্তাহ বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের ভঙ্গুর বেড়িবাঁধগুলোকে দ্রুত এই সময়ের মধ্যে মেরামত করতে হবে, যাতে গত বছর আম্পানের পর খুলনার কয়রায় বাঁধ ভেঙে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তা এবার না হয়।’