
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ক্লাস নিচ্ছিলাম। এমন সময় ফোনে বিদ্যুতের মিস্ত্রি রহিম যা বলল তাতে খারাপ লাগল। আমরা যখন পৌঁছালাম, ততক্ষণে রহিম অন্যদের সাহায্যে সেপটিক ট্যাংক থেকে ছোট্ট তুলতুলে ছানাটিকে উদ্ধার করে এনেছে। কিসের ছানা বুঝতে পারছিল না। ছানাটিকে ভালোভাবে পরীক্ষা করলাম। ওর গা ভেজা ভেজা, তখনো কাঁপছিল। ছানাটির পরিচয় ওকে বললাম। কিছুক্ষণ রোদে রাখার পর ছানাটি সজীব হতে শুরু করল। সেপটিক ট্যাংক ও আশপাশটা দেখলাম। জায়গাটা এদের বসবাস ও বংশবিস্তারের জন্য বেশ উপযোগী। সেপটিক ট্যাংকের দুটো মুখই খোলা, কোনো ঢাকনা নেই। আমি নিশ্চিত ওর মা আশপাশেই আছে। ছানাটির ছবি নিলাম। এরপর সেপটিক ট্যাংকের পাশের ঝোপে ছেড়ে দিয়ে দূর থেকে লক্ষ করতে থাকলাম ওর মা আসে কি না। জরুরি কাজে অনুষদে চলে গেলাম। রহিমকে বলে গেলাম, অবশ্যই মা এসে ওকে নিয়ে যাবে, তুমি লক্ষ রেখো ও আমাকে জানিয়ো। পরে ছানাটি সুস্থভাবে ফিরেছে জেনে মনে শান্তি পেলাম।
এটি এক দুর্লভ স্তন্যপায়ী প্রাণী বাগডাশ (Large Indian Civet)। বাগডাশা, বড় খাটাশ, বাগখ্লাশ, বড় ভাম বা হুইচা নামেও পরিচিত। Viverridae পরিবারভুক্ত প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম Viverra zibetha।
প্রাপ্তবয়স্ক বাগডাশের দৈর্ঘ্য ৮০-৮৬ সেন্টিমিটার, লেজ ৪৫ সেন্টিমিটার ও উচ্চতা ৩৮ সেন্টিমিটার। ওজন ৫-১১ কেজি। মাথা ও দেহ লম্বাটে। কালো পাগুলো খাটো ও শক্তপোক্ত। দেহ ধূসর-কালো লোমে আবৃত, যার ওপর অসংখ্য কালো ফোঁটা ও ডোরা। গলার দুপাশে তিনটি কালো ও দুটি সাদা ফিতা। লম্বা লেজটিজুড়ে অনেকগুলো কালো ও সাদা বলয়। পুরুষ স্ত্রীর চেয়ে কিছুটা বড়।
সুন্দরবন বাদে বাংলাদেশের সর্বত্র বাগডাশ দেখা যায়। এরা নিশাচর ও ভূচারী। গাছে চড়তে ওস্তাদ। ঘাসবন, ঝোপজঙ্গল, ঘন বনাঞ্চল, পরিত্যক্ত ইটভাটা, ঘরবাড়ি, পরিত্যক্ত গর্ত ইত্যাদিতে বাস করে। একই জায়গায় একসঙ্গে কয়েকটি পরিবার বাস করতে পারে। এরা মূলত মাংসাশী প্রাণী। সাপ, ব্যাঙ, ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, হাঁস-মুরগি-কবুতর, ডিম, মাছ ইত্যাদি খায়। প্রয়োজনে ফল, মূল, কীটপতঙ্গ ইত্যাদিও খেতে পারে।
এরা বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। প্রায় ৭০-৮০ দিন গর্ভধারণের পর স্ত্রী তিন-চারটি বাচ্চার জন্ম দেয়। বুনো পরিবেশে প্রায় ১৫ বছর ও আবদ্ধাবস্থায় ২০ বছর বাঁচে।
বর্তমানে এ দেশে এরা মোটেও ভালো নেই। আর এ জন্য যে কটি কারণ আছে তার মধ্যে একটি হলো খাদ্য ও আবাস-সংকট। হাঁস-মুরগি-কবুতর খাওয়ার অপরাধে গ্রামাঞ্চলে এরা নির্বিবাদে মারা হচ্ছে। সাঁওতাল ও অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরাও আমিষের চাহিদা মেটাতে নিয়মিত হত্যা করছে এদের। ফলে ধীরে ধীরে কমে গিয়ে বর্তমানে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় নাম লিখিয়েছে।