ছোট্ট পাখি শ্বেতাক্ষী

বহুপুষ্পিকা গাছে শ্বেতাক্ষী। ছবিটি লেখক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলেছেন
বহুপুষ্পিকা গাছে শ্বেতাক্ষী। ছবিটি লেখক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলেছেন

নাচনাগাছের ছোট ছোট ফল খেতে ২ নভেম্বর ২০১৬ সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বন্য প্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের কাছে আট প্রজাতির পাখি এসেছিল। দোয়েল, কাঠশালিক, হলদে বউ, বড় বসন্তবাউরি, তিলা ঘুঘু, লেজ নাচুনে, টুনটুনি ও চোখে চশমা পরা ছোট্ট সুন্দর একটি পাখি। এদের মধ্যে চশমাপরা ওই পাখিটিই ছিল সবচেয়ে সুন্দর। ছোট্ট ও ছটফটে স্বভাবের পাখিটিকে প্রথম দেখি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের মূলঘর গ্রামে ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে। তারপর বহুবার দেখেছি। ছবিও তুলেছি প্রচুর, তবে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ছবিটি তুলেছি ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদতাত্ত্বিক উদ্যানের বহুপুষ্পিকা গাছে মধুপানের সময়। চলতি জানুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে Environmentmove.com আয়োজিত Eco Festival 2017 শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে আমার তোলা ওই ছবিটিও প্রদর্শিত হয়েছে।

ছোট্ট, সুন্দর মায়াবী এই পাখিটির নাম শ্বেতাক্ষী বা বাবুনাই। চোখের চারদিক ঘিরে সাদা বলয় দেখে মনে হয় যেন চশমা পরে আছে। তাই তো চশমা পাখি বা চশমা টুনি নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম White Eye বা Oriental White Eye। পরিবার Zosteropidae ও বৈজ্ঞানিক নাম Zosterops palpebrosus

শ্বেতাক্ষী এ দেশের অন্যতম ছোট পাখি। সবচেয়ে ছোট পাখি ফুলঝুরির পরই ওর স্থান। মাত্র ১০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৯ গ্রাম ওজন। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও পিঠ হলুদাভ-সবুজ। ডানা ও লেজ কালচে। গলা, বুকের উপরাংশ ও লেজের তলা উজ্জ্বল হলুদ। বুক ও পেট সাদা। চোখের কোনায় কালচে দাগ। চোখ বাদামি-হলুদ। ঠোঁট কালচে ও নিচের ঠোঁটের গোড়া বাদামি। পা, পায়ের পাতা ও নখ ধূসর-বাদামি। ছানাদের চোখে চশমা থাকে না।

 এটি আমাদের আবাসিক পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও ওমান, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চীন, ভারত, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশে বাস করে। পুরোপুরি বৃক্ষচারী, গাছের শাখায়-পাতায়-ফুলে লাফিয়ে লাফিয়ে ও উড়ে উড়ে খাদ্য সংগ্রহ করে। কখনো কখনো উল্টো হয়ে ডালে ঝুলে ফুলের মধু পান করে বা ফল খায়। কীটপতঙ্গ, রসাল পোকা, ফুলের রস, পাকা ফল, বীজ ইত্যাদি প্রিয় খাদ্য।ÿ ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে এবং ফুল-ফলের পরাগায়ন করে প্রকৃতিকে সজীব রাখে। মূলত প্রজননের সময় গান গায়।

এপ্রিল-মে মাসে গাছের সরু শাখায় সরু শিকড়, মাকড়সার জাল ইত্যাদি দিয়ে গোলাকার ঝুলন্ত বাসা বানায়। ডিম হয় দু-তিনটি, রং ফ্যাকাশে নীল। ডিম ফোটে ৯-১১ দিনে। ছানারা প্রায় ১০ দিনে উড়তে শেখে।