বিশ্ব জলাভূমি দিবস
জলাভূমি নষ্ট করা আর কিডনি বেচা একই কথা
উপকূলীয় প্রাকৃতিক জলাভূমির চেয়ে বেশি নষ্ট হয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ জলাভূমি। বিজ্ঞান বলছে, জলাভূমি ধ্বংসের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
সারা বছর বা বছরের একটা বড় সময় অথবা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকে বা ভেজা থাকে বলে অনেকেই জলাভূমি অপ্রয়োজনীয় অঞ্চল বলে মনে করেন। অবহেলা করেন। জলাভূমিকে এখনো ‘পতিত’ নিচু অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নিচু মানেই পতিত বা অকাজের জমি নয়। প্রকৃত পক্ষে জলাভূমি মানে ‘জলাভূমি আশ্রিত জীবনপ্রবাহ’।
আন্তর্জাতিকভাবে জলাভূমি বলতে জলে ডোবা নিচু ভূমিকে বোঝায়; প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম যেকোনো উৎস থেকে সেই জল আসতে পারে। এলাকাটি সারা বছর কিংবা বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় জলের নিচে থাকতে পারে। জলাভূমির পানি স্থির অথবা গতিশীল হতে পারে; এলাকা বা অবস্থান ভেদে পানির স্বাদে তারতম্য থাকতে পারে। মিষ্টি বা স্বাদু পানি, আধা লবণাক্ত বা লবণাক্ত হতে পারে। এ ছাড়া অল্প স্রোতের কম গভীরতাসম্পন্ন সামুদ্রিক এলাকাও (ছয় মিটারের কম গভীর) জলাভূমি হিসেবে গণ্য করা যায়। প্রকৃতির কিডনি হচ্ছে জলাভূমি। কিডনি ছাড়া যেমন জীবন থেমে যায়, তেমনি জলাভূমি ছাড়া প্রকৃতি আর বাসযোগ্য থাকবে না।
জলাভূমির এসব সংজ্ঞা আর মাপকাঠি ঠিক করা হয় আজ থেকে ৫০ বছর আগে, ১৯৭১ সালে। বাংলাদেশ তখন মুক্তিযুদ্ধে। আমাদের জলাভূমিগুলো তখন মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি, রক্তাক্ত রণাঙ্গন। অনেক বিজয়গাথা তৈরি হয়েছে হাওরে, বাঁওড়ে, বিলে, জলাশয়ে। জলাভূমির কাছে আমাদের ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না। সেই একাত্তরে ইরানের রামসারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ রামসার কনভেনশন অন ওয়েটল্যান্ডস নামের এক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সই করে। উদ্দেশ্য জলাভূমির বিনাশ রোধ করা। স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র নিজ নিজ জলাভূমির রক্ষা ও বিকাশ নিশ্চিত করবে। ১৯৭৫ সালে রামসার কনভেনশন চুক্তি কার্যকর হয়। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ এ চুক্তিতে সই করে। এখন পর্যন্ত ১৭১টি দেশ চুক্তি অনুমোদন করেছে।
রামসার কনভেনশন ক্রমেই বিশ্বব্যাপী জৈব পরিবেশ রক্ষার একটি সম্মিলিত প্রয়াস হিসেবে বেগবান হচ্ছে। শুরু থেকেই জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনেসকো রামসার কনভেনশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছে। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর ১৬৯ মিলিয়ন হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ১ হাজার ৮২৮টি স্থানকে আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সুন্দরবন ১৯৯২ সালের ২১ মে রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুনামগঞ্জের নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল হিসাবে খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওর ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি রামসার অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়। হাকালুকি হাওরও এখন রামসার বিবেচ্য তালিকায়।
এ কথা বলতে বাধা নেই, ৫০ বছর ধরে নিরলস চেষ্টা করে মানুষের লোভলালসা, রাজনৈতিক অভিলাষ থেকে জলাভূমি তেমনভাবে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। বিংশ শতাব্দী আর একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জলাভূমি গ্রাসের গতি গড়ে প্রায় চার গুণ (৩.৭) বেড়ে যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর পর থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবী হারিয়েছে ৬৪ থেকে ৭১ শতাংশ ভাগ জলাভূমি। উপকূলীয় প্রাকৃতিক জলাভূমির চেয়ে বেশি নষ্ট হয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ জলাভূমি। বিজ্ঞান বলছে, জলাভূমি ধ্বংসের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
জলাভূমি রেখে লাভ কী?
ভোগবাদী জীবনাচরণ খালি চোখে জলাভূমির লাভক্ষতির হিসাব মেলাতে পারে না। জলাভূমি আসলে জলাধার। এটি পানি ধারণ করে। বর্ষার ঢল সামলাতে নদী, নদী অববাহিকার জনপদ আর কৃষিকে সাহায্য করে। আবার শুকনো মৌসুমে নদীর পানিতে টান ধরলে জলাভূমি উদার হাতে তা নদীকে ফিরিয়ে দেয়। শুধু ফিরিয়ে দেয় না, ব্যাংকের মতো মুনাফাসহ ফিরিয়ে দেয়। বর্ষার আবর্জনাময় ঘোলা জলকে ফটিক জলে পরিণত করে সে নদীকে সাগরে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তাই বন্যা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে পানির গুণাগুণ উন্নয়ন ও রক্ষায় জলাভূমির ভূমিকা অনেক। এতে শুধু নদীর লাভ হয় না, মাছেরও বিস্তর উপকার হয়।
জলাভূমির প্রতি মানুষের চরম নিষ্ঠুর ও ভোগবাদী আচরণের পরও এখনো পৃথিবীর মোট উৎপাদনশীলতার ২৪ শতাংশ টিকে আছে জলাভূমিকে কেন্দ্র করে। নদী আর উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের প্রধান উৎস আমাদের জলাভূমি। পৃথিবীর প্রায় ৩ বিলিয়ন জনসংখ্যার (যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেক) প্রধান খাদ্য ধান থেকে আসা ভাত। ধানের বেশির ভাগই উৎপাদিত হয় জলাভূমিতে। আমাদের হাওরগুলো এখনো এ দেশে ধানের প্রধান উৎপাদক।
জলাভূমি মাছ আর অন্য জলজ প্রাণীর শুধু খাবার সরবরাহ করে না, তাদের নিরাপদ আবাস আর প্রজননের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বর্ষায় নদীতে ঢল নামলে স্রোতের তীব্রতা বেড়ে গেলে নদীর মাছ আর জলজ প্রাণী তাদের ছানা–পোনা নিয়ে কাছের বিল–বাঁওড়ে আশ্রয় নেয়। জলাভূমিকে এভাবে প্রকৃতি জলজ প্রাণীর নিরাপদ বাসস্থান আর সংরক্ষকের ভূমিকা দিয়েছে।
মেরু অঞ্চলের পাখিদের কাবু করা শীত থেকে রক্ষা করে উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের জলাভূমি। ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর সঙ্গে সঙ্গে অতিথি পাখিদের খাবারের প্রধান উৎস হয়ে ওঠে নানা বর্ণের আর আকারের জলাভূমিগুলো।
পৃথিবীর নানা দেশে জলাভূমিকেন্দ্রিক পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। জলাভূমি আগে শুধু শীতকালে পাখি শিকারিদের টানত, এখন সারা বছর নানা মতের পর্যটকদের টানে। জলাভূমির পর্যটক আকর্ষণের ক্ষমতা পরিবেশবান্ধব উপায়ে ব্যবহার করা যায়।
মনে রাখতে হবে, জলাভূমি মানুষের হাতে গড়ে উঠেছে চমকে দেওয়ার মতো বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সভ্যতা ও সংস্কৃতি। জলাভূমি না থাকলে সেটাও আমরা হারাব।
জিদের বলি জলাভূমি গার্ডেন অব এডেন
একটা সময় ছিল যখন ইরানের ক্ষতি করার জন্য তার প্রতিবেশীদের খোলা চেক দেওয়া হয়েছিল। সুযোগ বুঝে যার যা খেদ, উচ্চাশা ছিল, সবকিছু হাসিল করার দৌড় শুরু করে দেয় অনেকে। কিন্তু জিদ আর গোঁয়ার্তুমি যে ক্ষমতাপাগল নেতাদের কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায়, তার এক করুণ নজির সৃষ্টি করেন সাদ্দাম হোসেন। জানা ইতিহাসের সূত্র অনুযায়ী, পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো শাত-ইল-আরবের কিডনি হিসেবে খ্যাত মার্শ আরব বা আরবের জলাভূমিকে জলাঞ্জলি দেন তিনি। সত্তরের দশকে বা আশির দশকের প্রথম ভাগে এ দেশ থেকে যাঁরা চাকরিসূত্রে ইরাকে গেছেন, তাঁরা দেখে থাকবেন মার্শ আরবের মোহনীয় সৌন্দর্য। মরুভূমির মধ্যে যেন এক ভরা জলের হাওর। দক্ষিণ ইরাকের যেখানে দজলা আর ফোরাত (টাইগ্রিস ইউফ্রেটিস) মিলেছে, সেখানে তৈরি এই জলাভূমিকে বাইবেল বলেছে গার্ডেন অব এডেন। সেখানকার বাসিন্দাদের গৃহনির্মাণশৈলীর কোনো তুলনা নেই। স্রেফ নলখগরা দিয়ে যে ধরনের ঘরবাড়ি মসজিদ তাঁরা বানাতেন, তা অনেক স্থপতির কাছে বিস্ময়কর। স্থাপত্যের দিক থেকে অনন্য এই বাড়িগুলোকে বলা হয় ‘মুদিফ’, যা তৈরি হয় কাঠ, পেরেক, কাচ ছাড়াই। জলাভূমিতে খড়কুটো আর মাটি জমা করে তৈরি দ্বীপের ওপর বাড়িগুলো বানানো হতো। তাই মার্শ আরবদের গ্রামগুলো ওপর থেকে দেখলে হাজার হাজার দ্বীপের সমষ্টি বলে মনে হতো। এই জায়গাকে বলা হতো ‘ভেনিস অব মেসোপটেমিয়া’।
চোখের নিমেষে যেভাবে শেষ হলো জলাভূমি গার্ডেন অব এডেন-মার্শ আরব
মূল সমস্যা শুরু হয় ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর। ইরান সীমান্তঘেঁষা এই জলাভূমি যাতে শিয়া বিদ্রোহীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত না হয়, সেটাই ছিল সাদ্দামের প্রধান চিন্তা। পুরো জলাভূমি শুকিয়ে ফেললে কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই অঞ্চলে আর আশ্রয় নিতে পারবে না—এই বিশ্বাস থেকে দজলা ও ফোরাত নদী দুটিতে বাঁধ দিয়ে পানির গতিপথ পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। পুরো কাজ করার জন্য সাদ্দাম হোসেন তাঁর সমস্ত সামর্থ্য প্রয়োগ করেন। দেশের সমস্ত পুরকৌশল নির্মাণ যন্ত্রপাতি, সমস্ত খননযন্ত্র এনে জড়ো করে দ্রুতগতিতে বাঁধ নির্মাণ করে দজলার পানিপ্রবাহ বন্ধ করা হয়। ১৯৯৩ সাল নাগাদ পুরো জলাভূমি দুই-তৃতীয়াংশ শুকিয়ে ফেলা হয়, যেটা ধীরে ধীরে ২০০০ সালের ভেতর পুরো ৯০ শতাংশ জলাভূমি শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়। একসময়কার ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশাল জলরাশি পরিণত হয় মরুময় ধু–ধু বালুচরে। সাদ্দাম নেই। আবার গার্ডেন অব এডেনের প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা চলছে।
আমাদের সাদ্দামদের কে সামলাবে
ইরাকে ছিল একজন সাদ্দাম। কিন্তু আমাদের তো ঘরে ঘরে জলাভূমিখেকো সাদ্দাম। যেখানেই জলাভূমি, সেখানেই সাদ্দাম। দিন দিন জলাভূমি চলে যাচ্ছে ব্যক্তিমালিকানায়। বিভিন্ন গবেষণার তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট জমির দুই-তৃতীয়াংশই জলাভূমি। এক দশকেই দেশ প্রায় ২২ শতাংশ জলাভূমি হারিয়েছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৭০ সাল নাগাদ দেশে কোনো কৃষিজমিই থাকবে না। আইনে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত জলাধার ইজারা দেওয়া যাবে না। কিন্তু আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে দিব্যি চলেছে ইজারা। উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জলাভূমিগুলোর সঙ্গে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমিতে প্রায় ২১ লাখ হেক্টর জলাভূমি ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জল নিষ্কাশন ও সেচে’ হারিয়ে গেছে।
তথ্যের অভাব
জলাভূমির হালনাগাদ কোনো তথ্য এক জায়গায় নেই। বলা হয়, দেশের মোট ৩৭৩টি জলাভূমির আয়তন হবে প্রায় ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর। এসব জলাভূমিতে কী পরিমাণ জীববৈচিত্র্য আর কী ধরনের হুমকি আছে, তা-ও কারও জানা নেই। জলাভূমি সংরক্ষিত না থাকায় পরিযায়ী পাখিরা আর আগের মতো আসছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এখন পর্যন্ত ১২টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বলে ঘোষণা করা হয়েছে, যার প্রায় সব কটিই জলাভূমি। এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে সুন্দরবন, টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, মারজাত বাঁওড় এবং পরে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু এবং গুলশান লেককে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বিধিবিধান
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮-ক-এর অনুচ্ছেদে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্য প্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’ এমন বিধান সরকারের পরিবেশবান্ধব নীতির প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী, এসব জলাভূমির কাছে বিশেষ করে প্রতিবেশগত বিপর্যয়ের মুখোমুখি অঞ্চলে ক্ষতিকর কারখানা স্থাপন, মাটি, পানি ও বায়ু দূষণকারী কার্যক্রম, মাছসহ জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ এবং যেকোনো ধরনের পরিবেশদূষণ নিষিদ্ধ। বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু ভিন্ন। হাওর বোর্ড বিলুপ্ত করে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর তৈরি হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন জাতীয় কমিটি’ গঠনের প্রজ্ঞাপন ইতিমধ্যে জারি করা হয়েছে।
কী করা যায়
ইতিমধ্যে আদালত নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ (লিভিং এনটিটি) বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু নদীর প্রাকৃতিক বন্ধু জলাভূমির কী হবে। জলাভূমি না থাকলে নদীর অস্তিত্ব কাগুজে হয়ে যাবে। তাই জলাভূমি জীবন্ত সত্তা ঘোষণা এখন সময়ের দাবি।
জলাভূমি রক্ষা করতে হলে এখনই ইজারা দেওয়া বন্ধ করে ‘টোকেন ফি’র মাধ্যমে শুধু জেলেদের মাছ ধরার সুযোগ রাখা যেতে পারে। ২০১৭ সালের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে অন্য দেশ থেকে আসা পানি নিয়মিত পরীক্ষা করে বোঝা দরকার, খনির বর্জ্য মাছ ও অন্য জীবের কী ক্ষতি করছে। জলাভূমির জমি নিয়ে কৃষি আর মৎস্যের দড়ি টানাটানি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। জলাভূমির পুরোটা ধান চাষের আওতায় না এনে নির্দিষ্ট এলাকা মাছের অভয়াশ্রমের জন্য ছেড়ে দেওয়া উচিত।
জলাভূমি আলোচনায় হাওরের সঙ্গে সঙ্গে বাঁওড় বিল হালট আর মরা নদী বা দুই মাসের নদীগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতিবছর ২ ফেব্রুয়ারি জলাভূমি দিবসকে মাথায় রেখে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন জাতীয় কমিটি কি একটা সালতামামি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে না জলাভূমির স্বাস্থ্য আর তার হাল নিয়ে?
লেখক গবেষক nayeem5508@gmail.com