দেশে ২২ প্রজাতির কচ্ছপ

মহাবিপন্ন লালচোখা দিবা কাছিম
ছবি: অধ্যাপক কামরুল হাসান

দেশে একসময় বেশির ভাগ জলাশয় ঘিরে কচ্ছপের আনাগোনা ছিল। এখন গ্রামের জলাশয় ও নদীর পাড়ে কচ্ছপ দেখতে পাওয়া রীতিমতো অভাবনীয়। তারপরও কচ্ছপবৈচিত্র্যে বাংলাদেশ এগিয়ে।

বন্য প্রাণিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের ২০১৫ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২২ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়। এ হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে কম জায়গায় সবচেয়ে বেশি প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে বাংলাদেশে। সামগ্রিকভাবে কচ্ছপের প্রজাতি সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও ব্রাজিলে।

বিষয়টি সামনে এসেছে বিশ্ব কচ্ছপ দিবসকে ঘিরে। যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংস্থা আমেরিকান টরটয়েজ রেসকিউর উদ্যোগে কচ্ছপ রক্ষার ওপর নজর বাড়াতে ২০০০ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়।

বাংলাদেশে প্রজাতি সংখ্যা বেশি হলেও অনেকগুলোই বিলুপ্তির পথে। বন বিভাগ ও প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএনের হিসাবে বাংলাদেশে মোট ৩০ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ২২টি প্রজাতি বাংলাদেশে তো বটেই, বিশ্বজুড়ে বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কচ্ছপের প্রজাতি সংরক্ষণে যেসব উদ্যোগ নিয়েছি, তা বেশ সফলতার মুখ দেখছে। মহাবিপন্ন প্রজাতির বাটাগুড় বাস্তা, পাহাড়ি শিলা ও হলুদ কেটো কচ্ছপের প্রজননে সহায়তা করছি। আর করোনার কারণে সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজননও বেড়েছে।’

বন বিভাগ ও বন্য প্রাণিবিষয়ক সংস্থা ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স যৌথভাবে কচ্ছপের মহাবিপন্ন তিন প্রজাতি বোস্তামি, পাহাড়ি শিলা ও হলুদ কেটো কচ্ছপের প্রজনন ঘটিয়েছে। গত বছর ২১০টি বোস্তামি কচ্ছপের বাচ্চা হয়, যা এখন বড় হচ্ছে। এ বছর ৩২০টি বাচ্চা হতে পারে বলে মনে করছে সংস্থা দুটি।

অন্যদিকে বন বিভাগ নেচার কনজারভেশন সোসাইটিসহ (ন্যাকম) কয়েকটি বেসরকারি বন্য প্রাণিবিষয়ক সংস্থার সহায়তায় চার প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজননে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় এবার গত বছরের চেয়ে কচ্ছপ বেশি ডিম পেড়েছে। মানুষের উৎপাত কমায় তা সম্ভব হয়েছে। ওদিকে গাজীপুরে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে গড়ে তোলা কচ্ছপ সংরক্ষণকেন্দ্রে পাহাড়ি শিলা কচ্ছপের ৪৪টি ছানা বড় হচ্ছে।

ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের গবেষক শাহরিয়ার সিজার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধারা ধরে রাখা গেলে আমরা আরও বেশ কিছু প্রজাতির কচ্ছপের প্রজননে সহায়তা করতে পারব।’