নতুন ব্যাঙ ‘চাটগাঁইয়া গাতা’

নতুন প্রজাতির ব্যাঙ চাটগাঁইয়া গাতা
ছবি: সংগৃহীত

দেশে নতুন এক প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া গেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে চাটগাঁইয়া গাতা ব্যাঙ। আকারে এক ইঞ্চিরও কম এ ব্যাঙ বেশি থাকে হাতির চলার পথে পায়ের চাপে তৈরি হওয়া গর্তে। কক্সবাজারের চকরিয়ার চুনতি বনভূমি, টেকনাফ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমিতে এ ব্যাঙ দেখা গেছে। বিশ্বে এই প্রাণী এর আগে শুধু মিয়ানমারে পাওয়া গেছে।

দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া গেছে। নতুন এ প্রজাতি যুক্ত হওয়ায় তা ৫১টি হলো। এর মধ্যে ১০ প্রজাতির ব্যাঙ বিপন্ন তালিকার অন্তর্ভুক্ত।

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী পিআরজে কেমিস্ট্রি গত বৃহস্পতিবার নতুন এ ব্যাঙ পাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো এ ব্যাঙের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে একে একটি নতুন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই গবেষক দলে রয়েছেন বন্য প্রাণিবিষয়ক সংস্থা ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের ছয় বিজ্ঞানী এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান। ব্যাঙটির নমুনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে সংরক্ষিত আছে।

ব্যাঙটির বৈজ্ঞানিক নাম Phrynoglossus swanbornorum। ২০১৭ সালে চুনতি বনভূমি থেকে ব্যাঙটির নমুনা সংগ্রহ করে ওই গবেষক দলটি। মূলত ডাক শোনার পর তাঁদের কাছে একে নতুন বলে মনে হয়। ওই ডাক রেকর্ড করেন তাঁরা। তা যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তৈরি করা প্রাণীদের ডাক চিহ্নিত করাবিষয়ক সফটওয়্যার রেইভেনের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। তাতে দেখা যায়, বিশ্বের অন্য কোনো ব্যাঙের ডাকের সঙ্গে এর মিল নেই।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে চুনতির বন থেকে ব্যাঙটির পাঁচটি নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। সেগুলো ইনভেন্ট নামের একটি ডিএনএ চিহ্নিত করা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করান। এর থেকে জানা যায়, এটি একটি নতুন প্রজাতির ব্যাঙ। অর্থাৎ বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্য কোনো দেশের স্থানীয় ব্যাঙের চেয়ে এটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এরপর সেই তথ্য–উপাত্ত জমা দেওয়া হয় জিনব্যাংক নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায়। যেখানে বিশ্বের সব প্রাণীর ডিএনএ রক্ষিত আছে। সেখান থেকেও নিশ্চিত করা হয়, এটি নতুন প্রজাতির ব্যাঙ।

গবেষকেরা আরও জানান, কালচে সবুজ রঙের এ ব্যাঙের কয়েকটির পিঠে লম্বা দাগ দেখা গেছে। আবার কয়েকটির শরীরে এ ধরনের কোনো দাগ নেই। হাতির পায়ের ছাপ বা গর্তের পানিতে এরা কেন বেশি থাকে, তা নিয়ে গবেষক দলটি এখন বিস্তারিত গবেষণা করছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ইন্দোনেশিয়া ও চীনে এ জাতীয় ব্যাঙের কাছাকাছি ক্ষুদ্র আকৃতির ব্যাঙ দেখা যায়। বাংলাদেশেও এর আগে বেশ কয়েকজন প্রাণিবিজ্ঞানী একে দেখতে পান। কিন্তু দেশের অন্য আরও তিন প্রজাতির ক্ষুদ্র ব্যাঙের একটি ধরন হিসেবে একে মনে করেন। ফলে একে নিয়ে আর বিস্তারিত গবেষণা কেউ করেননি।

বন্য প্রাণিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএনের মানদণ্ড ব্যবহার করে গবেষক দলটি এ ব্যাঙের বসতি এলাকা হিসেবে ভারতের মিজোরাম, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের আরাকান এলাকাকে চিহ্নিত করেছেন। এখনো এর বসবাসের জন্য উপযোগী বনভূমি কিছুটা হলেও টিকে আছে। এ কারনে তাঁরা একে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এ ব্যাপারে ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের গবেষক শাহরিয়ার সিজার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের যে অঞ্চলে এ ব্যাঙের প্রজাতিটি পাওয়া গেছে, সেখানকার প্রতিবেশ ব্যবস্থায় এদের মাঝেমধ্যেই দেখা যায়। তবে সেখানে যেভাবে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে, তাতে এদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।