পাহাড় নিঃশেষ, বিপন্ন চট্টগ্রামের পরিবেশ

>
কয়েকটি পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এই সুযোগে ওই সড়কের আশপাশে পাহাড় কেটে বসতঘর বানাচ্ছেন স্থানীয় একশ্রেণির মানুষ। শনিবার বায়েজিদ থানার আরেফিন এলাকায়।  ছবি: সৌরভ দাশ
কয়েকটি পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এই সুযোগে ওই সড়কের আশপাশে পাহাড় কেটে বসতঘর বানাচ্ছেন স্থানীয় একশ্রেণির মানুষ। শনিবার বায়েজিদ থানার আরেফিন এলাকায়। ছবি: সৌরভ দাশ
পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকায়। বর্তমানে পাহাড় কাটা চলছে অন্তত ১৫টি স্থানে।

‘নিম্নবঙ্গের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা চাটগাঁ। নিচু টিলা, চুড়োয় বাড়ি, পাকদণ্ডী (ঘুরপথ) বেয়ে উঠতে হয়। কোনো কোনো পাহাড়ে চমত্কার সব দৃশ্য চোখে পড়ে। দূরে দিগন্তে কর্ণফুলী গিয়ে মিশেছে সমুদ্রে, চারপাশে ছড়ানো–ছিটানো পাহাড়ের চুড়োয় বিন্দুর মতো সাদা বাংলো, মাঝে মাঝে বৃক্ষের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে মন্দির বা মসজিদ। পাহাড়ের ওপর থেকে নিচে তাকালে চোখে পড়ে সরু রাস্তা, উপত্যকা।’ ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রাম নগরের বর্ণনা এভাবে উঠে আসে তৎকালীন কালেক্টর এ এল ক্লে–এর আত্মজীবনীমূলক বই ফ্রম আ ডায়েরি ইন লোয়ার বেঙ্গল-এ।

পাহাড়ের সেই বাহার আজ আর নেই। চট্টগ্রামকে ক্লে সাহেবের বর্ণনায় দেখতে গেলে তা কেবল অচেনাই মনে হবে। ইংরেজ শাসনের পর পাকিস্তানের ২৪ বছরে কমেছে পাহাড়ের সংখ্যা। স্বাধীনতার পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৮৮টি পাহাড় পুরোটাই বিলুপ্ত হয়েছে। একই সময়ে আংশিক কাটা হয়েছে ৯৫টি। এরপরের ১২ বছরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পাহাড় নিধন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি গবেষণা ও প্রথম আলোর নিজস্ব অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আবাসিক এলাকা, ইটভাটা, কারখানা নির্মাণ ও মাটি বিক্রির জন্য এসব পাহাড় কাটা হয় বলে গবেষণায় বলা হয়।

বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্যক্তি, আবাসন ব্যবসায়ী, ইটভাটার মালিক, রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে পাহাড় নিধন করার অভিযোগ রয়েছে। বাদ যায়নি সরকারি সংস্থাও। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বোস্তামী সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে। ওই সড়কের আশপাশে এখন ভূমি দস্যুরা পাহাড় কাটার উৎসবে মেতেছে। এ ছাড়া নগরের খুলশী, শেরশাহ বাংলাবাজার, আকবর শাহ শাপলা আবাসিক এলাকা, চন্দ্রনগরসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১৫ স্থানে চলছে পাহাড় নিধন। সরেজমিনে এই চিত্র দেখা গেছে।

পাহাড় কাটার কারণে ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। এ ছাড়া বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নিঃশেষ হচ্ছে বনাঞ্চল। একই কারণে পলি জমে নালা–নর্দমা ভরাট ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে একাধিক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম নগর ও এর আশপাশে ২০০টি ছোট–বড় পাহাড় ছিল। বেশির ভাগ পাহাড়ের মালিক সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।

৩২ বছরে শেষ ৫৭ শতাংশ পাহাড়

চট্টগ্রামের পাহাড় কাটা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক এস এম সিরাজুল হক একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে ‘হিল কাটিং ইন অ্যান্ড অ্যারাউন্ড চিটাগং সিটি’ শীর্ষক এক গবেষণা করেন। ২০১১ সালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।

এতে বলা হয়, বেশির ভাগ পাহাড় কাটা হয় পাহাড়তলী, খুলশী, বায়েজিদ, লালখান বাজার মতিঝরনা, ষোলশহর এবং ফয়’স লেকে। ১৯৭৬ থেকে ৩২ বছরে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি আংশিক কেটে ফেলা হয় বলে গবেষণায় উল্লেখ করেন।

১৯৭৬ সালে নগরের পাঁচ থানা এলাকায় মোট পাহাড় ছিল ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার। ২০০৮ সালে তা কমে হয় ১৪ দশমিক ০২ বর্গকিলোমিটার। এ সময়ে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কাটা হয়। এটা মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ। নগরের বায়েজিদ, খুলশী, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালি ও পাহাড়তলী থানা এলাকায় এসব পাহাড় কাটা হয়। সবচেয়ে বেশি ৭৪ শতাংশ কাটা পড়ে পাঁচলাইশে।

গবেষক অধ্যাপক এস এম সিরাজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় কাটা দুর্বলের কাজ নয়। যাঁরা বড় বড় কথা বলেন, তাঁরাই পাহাড় কাটার সঙ্গে যুক্ত। বর্তমান পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।

এদিকে ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ন্যাচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘এনভায়রনমেন্টাল ডিগরিডেশান থ্রো হিল কাটিং ইন চিটাগং ডিসট্রিক্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাকর্মটি হয় ২০০৫ সালে। এর নেতৃত্বে ছিলেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক এম এ সাত্তার। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরের খুলশীতে সর্বোচ্চ ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং শহরতলির চৌধুরীহাট এলাকায় সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ পাহাড় কাটা হয়। ৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এসব পাহাড় কাটা হয়। নগর ও আশপাশের ২০০ পাহাড়ের মধ্যে প্রায় ১০০টি কেটে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে বলে গবেষণায় বলা হয়।

অধ্যাপক এম এ সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় রক্ষা করা খুবই দরকার। পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর একটু তৎপর হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা করা সম্ভব।

পাহাড় কেটে সড়ক এবং অতঃপর

সিডিএ পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করছে। এই সড়ক নির্মাণের জন্য প্রায় ১৫টি পাহাড় কাটার অনুমতি নেয় তারা। ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শর্ত লঙ্ঘন করায় গতকাল পরিবেশ অধিদপ্তর সিডিএকে ১০ কোটির বেশি টাকা জরিমানা করে।

সড়কটির আশপাশে এখন বিভিন্ন ব্যক্তি পাহাড় কাটছে। অন্তত ছয়টি স্থানে বড় আকারে পাহাড় কাটতে দেখা গেছে। খাড়াভাবে কাটার কারণে যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

১৮ জানুয়ারি নগরের বায়েজিদ শেরশাহ মোড় থেকে সড়কটি ধরে কিছুদূর গেলে পাহাড় কাটা চোখে পড়ে। আরেফিন নগর এলাকায় সড়কের দক্ষিণ পাশে দেখা যায়, পাহাড় কেটে বেড়ার ঘর বানানো হয়েছে। আর একটু এগোলে সুপারিবাগান এলাকা। সড়ক থেকে পাহাড় বেয়ে কিছুটা উঠলেই দেখা মেলে, পাহাড়ের চূড়া কেটে নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচটি ঘর।

এরপর সড়কটির পাঁচ নম্বর সেতু লাগোয়া উত্তর পাশে পাহাড়ের ওপর পাহাড় কেটে রীতিমতো কলোনি গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ঘর নির্মাণ করা হয় সেখানে। আরও ঘর নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গোলাম মো. নাছিম হোসেন নামে বায়েজিদ থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) এক বছর ধরে এই ঘরগুলো নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসআই নাছিম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা পুরোপুরি মিথ্যা অভিযোগ। এ ধরনের কোনো ঘর পাহাড় কেটে আমি করিনি। কেউ আমার নাম বিক্রি করতে পারে।’

সড়কটির ৪ নম্বর সেতুর দক্ষিণ পাশে চারদিকে ইটের সীমানাদেয়াল দিয়ে ঘেরাও করে ভেতরে পাহাড় কেটে সমান করে ফেলা হয়। মাটিতে খননযন্ত্রের চাকার দাগ। রাতের বেলায় খননযন্ত্র দিয়ে এই পাহাড় কাটা হয় বলে অভিযোগ। একইভাবে ৬ নম্বর সেতুর পাশে পাহাড় কাটছেন নাছির নামের এক ব্যক্তি। ছবি তুলতে গেলে দুজন লোক এগিয়ে আসেন। তাঁদের মধ্যে সেলিম নামের একজন বলেন, খাড়া পাহাড় সমান করা হচ্ছে। তবে এলাকাটি নাছির সাহেবের।

সরেজমিনে অন্যান্য এলাকা

নগরের আরেফিন নগর এলাকায় পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে। উইমেন্স ইউনিভার্সিটির পেছনের ওই এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড় কেটে প্রায় সমান করে ফেলা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে কাউকে পায়নি। একই এলাকায় আরও দুই স্থানে পাহাড় কাটা হচ্ছে।

এ ছাড়া নগরের চন্দ্রনগর, শেরশাহ বাংলাবাজার এলাকায় পাহাড় কাটা হচ্ছে। আকবর শাহ থানাধীন শাপলা আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে দুজনকে দুই মাস আগে জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই এলাকায় আরও দুটি নতুন স্থানে পাহাড় কাটা চলছে। এ ছাড়া জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় পাহাড় কেটে প্রতিদিন উঠছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি। সেখানে খাস জায়গা বেচাকেনাও চলছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জঙ্গল ছলিমপুর সড়ক ধরে এক কিলোমিটারের মতো গেলে দেখা যায়, পাহাড় কাটা হচ্ছে। দিনের বেলায় সেখানে কাউকে দেখা যায় না। রাতে এই পাহাড় কাটা হয় বলে স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আরেফিন নগর এলাকায় পাহাড় কাটার স্থানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখানে পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করা হচ্ছে। অন্য যেখানেই আমরা খবর পাচ্ছি, সেখানে অভিযান চালাচ্ছি।’

গত বছর পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় পাহাড় কাটার দায়ে ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৪১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬০ টাকা জরিমানা করেছে।

নগরের বাইরে পাহাড় কাটা

চট্টগ্রাম নগরের বাইরে কক্সবাজার, চকরিয়া এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় কাটা হয় বলে গবেষণাগুলোতে উল্লেখ করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে গত ছয় মাসে অন্তত ১৫০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিয়েছে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডে পাহাড় কাটার অভিযোগে তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা পাহাড় কাটছেন, তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার প্রভাবশালী লোক রয়েছেন। চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশে বসতি গড়ে তোলার জন্য পাহাড় কাটা হয়। সীতাকুণ্ড ও অন্যান্য উপজেলায় পাহাড় কাটা হচ্ছে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্য। কক্সবাজারে পাহাড় কেটে চলছে মাটি বিক্রির ব্যবসা।

পাহাড় কাটার ইতিহাস

বিভিন্ন গবেষণাসূত্রে জানা গেছে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬০ সালে প্রথম চট্টগ্রামে আবাসিক এলাকা করার জন্য পাহাড় কেটে জঙ্গল পরিষ্কার করে। ১৮৭২ সালে চট্টগ্রামে জনসংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৭৮০ জন। এরপর চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে জনসংখ্যা এবং শহরের পরিধি বাড়তে থাকে। ১৯০১ সালে ১১ দশমিক ৬৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা ঘিরে শহর ব্যাপ্তি লাভ করে। তখন জনসংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার।

১৯৪৭ সালে শহর ১০৩ দশমিক ৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় হয়। জনসংখ্যা ৩ লাখ ৬৪ হাজার। ১৯৯০ সালে চট্টগ্রাম শহর ছিল ১৫৬ বর্গকিলোমিটার। তার মধ্যে ৭৮ বর্গকিলোমিটার ছিল পাহাড়। তখন জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ২৩ লাখ। শহর না বাড়লেও বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। বাড়তি এই জনগোষ্ঠীর চাপ গিয়ে পড়ছে পাহাড়ের ওপর।

১৯৫০ সালে নগরের ষোলশহর, নাসিরাবাদ, পাহাড়তলী ও ফৌজদারহাট এলাকায় শিল্প এলাকা স্থাপনের জন্য কিছু পাহাড় কাটা হয়।

চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়গুলোর উচ্চতা সর্বনিম্ন ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ মিটার পর্যন্ত। ১৯৬০ সাল থেকে সরকারি বাংলো তৈরির পাশাপাশি পাহাড় কিনে বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৭৬ সাল থেকে পাহাড় কাটা ব্যাপকতা পায়। ১৯৮০ সাল থেকে নগরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে আবাসিক এলাকা নির্মাণ শুরু হয়।

পরিবেশ বিপন্ন

দুটি গবেষণায় পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলাকে পাহাড়ধসের মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ৪০৮ জন মারা যায় বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর ২০০৭ সালে পাহাড়ধসে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ১২৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি পাহাড়ধস রোধে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন সুপারিশ দিয়েছিল। তার মধ্যে পাহাড় কাটা বন্ধ এবং বসতি রোধ অন্যতম।

তখন গঠন করা হয়েছিল শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। গত এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত কমিটির সর্বশেষ সভায় বলা হয়, নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ পাহাড়ে বসবাসকারী ৮৩৫ পরিবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

সিরাজুল হকের গবেষণায় বলা হয়, পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশ-প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন জঙ্গল ধ্বংস হচ্ছে। এ জন্য বানর, সাপ, হরিণ, মেছো বাঘসহ বিভিন্ন প্রাণীর আবাস হুমকির মুখে পড়েছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম শহরে প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটা হচ্ছে। পাহাড় কাটা, পাহাড়ে বসতি এবং পাহাড়ধসের জন্য সংশ্লিষ্ট পাহাড়ের মালিককে দায়ী করা দরকার। যদি তা করা হয়, তাহলে পাহাড় রক্ষা হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর কেবল তদারকির দায়িত্বে থাকবে।