প্রজাপতি বাদুড়ের সন্ধান

কলাগাছের পাতায় ‘পেইন্টেড ব্যাট’। টাঙ্গাইলের মধুপুর বনে।ছবি: মনিরুল এইচ খান

বাদুড়ের একটি প্রজাতিকে ১৩৪ বছর ধরে বাংলাদেশে দেখা যায়নি। সর্বশেষ ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত একটি গ্রন্থে (ফনা ইন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া) ওই প্রজাতি ঢাকায় দেখা গেছে বলে উল্লেখ ছিল। কিন্তু এরপর একে অনেকে খুঁজেছেন, পাননি। অবশেষে ৭ জুন বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে সেই সুন্দর বাদুড় ‘পেইন্টেড ব্যাট’ দেখা গেছে। টাঙ্গাইলের মধুপুর বনে একটি কলাগাছের পাতায় প্রাণীটিকে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান তাঁর এক গবেষণা সহকারী লজেশ মৃর কাছ থেকে খোঁজ পেয়ে মধুপুর বনে থাকা ওই বাদুড়ের ছবিও তুলতে পেরেছেন।

প্রজাপতি বাদুড় নামেও পরিচিত এই বাদুড় ভারতের কয়েকটি রাজ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এখনো দেখা যায়। তবে বাংলাদেশ থেকে এটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে অনেক প্রাণিবিজ্ঞানী ধারণা করছিলেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন ও বন বিভাগ থেকে ‘রেড লিস্ট’ নামে বাংলাদেশে বিপন্ন প্রাণীদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানেও এই বাদুড় সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই বলে মন্তব্য করা হয়েছে। বিশ্বের বন্য প্রাণিবিষয়ক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে এটি বাংলাদেশে আর টিকে নেই বলেই উল্লেখ করা হয়।

যুক্তরাজ্যের প্রাণিবিজ্ঞানী ডব্লিউ টি ব্লেনফোর্ড ১৮৮৮ সালে তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাণীদের পরিচিতিমূলক একটি বই লিখেছিলেন। ফনা ইন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া নামের ওই বইয়ে ঢাকায় উজ্জ্বল কমলা রঙের একধরনের বাদুড় দেখা যায় বলে উল্লেখ করা হয়। পেইন্টেড ব্যাট নামের দেখতে সবচেয়ে সুন্দর ওই বাদুড় পরবর্তী সময়ে আর দেখা যায়নি। Carnivola picta বৈজ্ঞানিক নামের বাদুড়টির ছবি বাংলাদেশ থেকে আগে তোলা হয়েছে, এমন তথ্য নেই।

বাংলাদেশে মোট ৩২ প্রজাতির বাদুড়ের দেখা পাওয়া গেলেও সেই তিন থেকে চার সেন্টিমিটার আয়তনের ছোট্ট বাদুড়টি মূলত পতঙ্গভুক। পুরোনো বাড়ি ও ঝোপে বাদুড়দের বেশি দেখা যাওয়ায় অনেক সাহিত্য ও চলচিত্রে বাদুড়কে অমঙ্গলের প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে বাদুড়কে প্রাণিবিজ্ঞানীরা প্রকৃতির অন্যতম উপকারী প্রাণী হিসেবে মনে করে থাকেন। বিশেষ করে প্রজাপতি বাদুড় কেবল পোকামাকড় খেয়ে টিকে থাকে।

জানতে চাইলে মনিরুল এইচ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত, এটা বড় সুসংবাদ যে এই বাদুড় আমাদের দেশে এখনো টিকে আছে। মধুপুর বনে থাকলে অন্যান্য বনেও এরা থাকতে পারে। ফলে এটি দেখলে যাতে কেউ একে ধরা বা মারার চেষ্টা না করে। কারণ, বাদুড় এমনিতেই একটি উপকারী প্রাণী। আর এই প্রজাতির বাদুড় মানুষের জন্য ক্ষতিকর অনেক পোকা খেয়ে আমাদের উপকার করে।’

প্রাণিবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অন্যান্য বাদুড়ের তুলনায় এ প্রজাতির বাদুড় কিছুটা ধীরে চলে। আর দিনের বেলা এরা কোনো একটি কলাগাছের পাতায় ঠায় বসে থাকে। কোনো শব্দ, বাতাস বা অন্য প্রাণীর আক্রমণ এলে এরা নড়াচড়া করে না। দেখতে উজ্জ্বল রঙের হওয়ায় দূর থেকে সাপ বা চিলের মতো প্রাণী এদের দেখতে পায়। আর এরা এ ধরনের বাদুড়কে ধরে খেয়ে ফেলে। এই স্বভাব বা বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রাণীটি পৃথিবীতে দ্রুত কমে আসছে।

মধুপুর বনে দেখা যাওয়া প্রজাপতি বাদুড়টির আয়তন প্রায় সাড়ে তিন সেন্টিমিটার ও ওজন সাড়ে চার গ্রাম। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও এরা সর্বোচ্চ পাঁচ গ্রাম ওজনের এবং সাড়ে তিন থেকে চার সেন্টিমিটার আয়তনের হয়ে থাকে। এরা বছরে একটি বাচ্চা দেয়। জুন মাস এদের প্রজননের সময়।