বনবিড়ালের চারটি ছানা

শিকলবন্দী সেই চারটি বনবিড়াল ছানা l ছবি: কল্যাণ প্রসূন
শিকলবন্দী সেই চারটি বনবিড়াল ছানা l ছবি: কল্যাণ প্রসূন

বনবিড়ালের ছানাগুলোর কোনো দোষ ছিল না, দোষ করেছিল ওদের মা। বুকের দুধ খাওয়ার বয়স পর্যন্ত ছানা চারটির জন্য মায়ের দুশ্চিন্তা ছিল না। ছানারা দুধপান ছেড়ে দেওয়ার পরে ওদের পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের জন্য মা বিড়ালটিকে হাত বাড়াতে হলো গেরস্থবাড়ির হাঁস-মুরগির দিকে। মাত্র চার দিনে সে চার-পাঁচজন গেরস্থের প্রায় ১৪-১৫টি হাঁস-মুরগির ছানা শিকার করে এনে ছানাদের খাওয়াল। অর্ধমৃত শিকার সে ছানাদের সামনে ফেলে দিয়ে ওদের শিকারের তালিমও দিচ্ছিল। পাড়ার লোকেরা লাঠিসোঁটা হাতে একদিন খুঁজে বের করল বাচ্চা চারটিকে, পাকড়াও করল, শিকলবন্দী করে বাড়িতে নিয়ে এল। খবর পেয়ে স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকেরা এবং এক সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত হলেন, ছানাগুলোকে তাঁরা অবমুক্ত করে দিলেন একটা বনে। ঘটনাটি কিছুদিন আগের, বৃহত্তর সিলেটের বিখ্যাত হাকালুকি হাওরের বড়লেখা উপজেলার একটি গ্রামের।
তুখোড় শিকারি এই বনবিড়ালটির দেখা পাওয়া যায় দেশের প্রায় সর্বত্র। গাছে চড়তে ওস্তাদ। এক লাফে পার হতে পারে ৭-১০ ফুট দূরত্ব। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ বিড়াল জুটি বাঁধার জন্য সঙ্গিনীর খোঁজে জোরে জোরে ডাকাডাকি করে। পুরুষ বাঘের যেমন বাচ্চা মেরে ফেলার প্রবণতা আছে, পুরুষ বনবিড়ালেরও সেই প্রবণতা আছে। বাঘিনী যেমন বারবার ছানাদের স্থানান্তর করে, বনবিড়াল মাতাও তাই করে। কুশলী শিকারি এরা। নানান কৌশল আছে শিকারের। আমি বহুবার তা দেখেছি বাগেরহাট থাকতে। লাফ দিয়ে পড়বে হাঁস-মুরগির ঘাড়ে, সামনের ডান থাবা বা দুই থাবা দিয়ে প্রবল শক্তিতে শিকার চেপে ধরবে মাটিতে, বেলুন দিয়ে রুটি বেলার মতো শিকারকে বেলবে, কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই শিকারের জীবন শেষ। তারপর শিকার মুখে ধরে ছুটবে নিরাপদ স্থানে।
এদের ইংরেজি নাম Jungle Cat. বৈজ্ঞানিক নাম felis chaus। শুধু শরীরের (লেজ বাদে) মাপ হতে পারে ৫০-৯৪ সেন্টিমিটার। লেজ ২০-২৬ সেন্টিমিটার। উচ্চতা ৩৬-৪০ সেন্টিমিটার। ওজন ০৪-০৯ কেজি। এদের গর্ভধারণকাল ৬৩-৬৬ দিন। প্রতি প্রসবে বাচ্চা হয় তিন-পাঁচটি। বাচ্চারা এক বছর বয়সে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। একনজরে ধূসর-বাদামি রঙের এই বনবিড়াল আকারে-গড়নে ও চলাফেরার ধরনে অনেকটাই আমাদের পোষা বিড়ালের মতো। তবে এদের পাগুলো সরু, লম্বাটে-ছিপছিপে ধরনের গঠন শরীরের, কানগুলো বড় ও খাড়া, কানের আগার পেছন দিকটা কালো। লেজের আগাও কালো। খাদ্যতালিকায় আছে ইঁদুর, ব্যাঙ, পাখি ও পাখির ডিম-ছানা।