বাদামি কসাই

বাদামি কসাই পাখি l ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমান
বাদামি কসাই পাখি l ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমান

বাড়ির পাশের মটরশুঁটিখেতের কিনারে বয়সী একটা শ্যাওড়াগাছ। সেই গাছে রোজ গোধূলি ও সন্ধেবেলায় একটা পাখি কর্কশ স্বরে বেজায় চেঁচামেচি করে। ওই বাড়ির ছোট ছেলেটি রোজই বাবাকে জিজ্ঞেস করে, পাখিটা অমন চেঁচায় কেন রোজ? বাবা ও মা মজা করে বলেন, পাখিটার স্বভাব তোর মতো, খালি বায়নাক্কা করে।

সেই বালক তরুণ বয়সে জেনেছিল, পাখিটির নাম বাদামি কসাই। আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে আসে, থাকে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত। সারা বাংলাদেশেই এদের দেখা যায়। পাখি ছোট, কিন্তু সাহস বড়। মেজাজ চড়ে থাকে সারাক্ষণ। একটুতেই প্রচণ্ড চেঁচামেচি জুড়ে দেয়। ভয়ানক স্বার্থপর পাখি। সব খাবার সে একাই খেতে চায়। প্রতি মৌসুমে এসে আস্তানা গাড়বে একই অঞ্চলে, যেনবা তার বাবার তালুক সেটা। অন্য পাখিদের তাড়া করতে ভয় পায় না।

মূল খাদ্য এদের মাটিতে থাকা বা উড়ন্ত পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, ছোট গিরগিটি-টিকটিকি-নির্বিষ সাপের ছোট বাচ্চা, ইঁদুরছানা ইত্যাদি। তেলাপোকা ও ঝিঁঝিপোকা অতীব প্রিয় খাবার। পান করে খেজুরের রসও। শিকার বড় হলে বা পরিমাণ বেশি হলে বরই-বাবলা ও তাল চারার করাতে গেঁথে ঝুলিয়ে রাখে মাংসের দোকানের ঝুলন্ত মাংসের মতো, নাম তাই কসাই পাখি। আমাদের সুলভ আবাসিক কসাইটিও বাদামি কসাইকে খাতির করে চলে।

রাতে যে গাছে আশ্রয় নেবে, সে গাছে যাতে অন্য পাখিরা রাতের আশ্রয় না নিতে পারে, সে জন্য চেঁচামেচি-গালাগাল ঝাড়তে থাকে সন্ধ্যার অন্ধকার নামা পর্যন্ত।

বাদামি কসাইয়ের ইংরেজি নাম Brown Shrike। বৈজ্ঞানিক নাম lanius cristatus। দৈর্ঘ্য ১৯ সেন্টিমিটার। ওজন ২৮-৩৭ গ্রাম।

শরীরের তুলনায় মাথাটা বড় এদের, লম্বাটে লেজ। একনজরে বাদামি রঙের পাখি। মাথার তালু-পিঠের উপরিভাগ গাঢ়-বাদামি, গলা-বুক-পেট হালকা বাদামি। চোখের ওপর দিয়ে কালো কাজলের টানটি নীলচে-কালো ছোট ঠোঁটটির সঙ্গে গিয়ে মিলেছে। পা কালচে। গলা সাদা। পুরুষের চোখের কাজল বেশি চওড়া। তবে মেয়েটির মতো বুকে আড়াআড়ি বাদামি ছিট ও টান থাকে না।