ভুট্টাখেতে নতুন পোকার আক্রমণ
![](https://images.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2020%2F01%2F25%2F31e52c4fe7485bcc5ec39b857b99c8a0-5e2bdcb3f2c33.jpg?auto=format%2Ccompress)
গত বছরের তুলনায় ভুট্টার উৎপাদন ১৪ শতাংশ বাড়তে পারে। মোট উৎপাদন হতে পারে ৪০ লাখ টন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ থেকে চলতি মাসে প্রকাশিত ‘বিশ্বের কৃষি উৎপাদন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্যের উল্লেখ রয়েছে।
সংস্থাটির হিসাবে, বিশ্বজুড়ে যে কটি দেশে ভুট্টার উৎপাদন সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে বাংলাদেশের নাম রয়েছে। তবে সুসংবাদের সঙ্গে একটি খারাপ খবরও দিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে, বিশ্বজুড়ে ফসলের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত ‘আর্মি পোকা’ বাংলাদেশের ভুট্টায় আক্রমণ করেছে।
শুধু ইউএসডিএ একাই নয়, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকেও গত বৃহস্পতিবার ওই পোকার আক্রমণ বিষয়ে একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলেছে, কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা করা না গেলে কয়েক লাখ ক্ষুদ্র ও দরিদ্র কৃষক বিপদে পড়বেন। এসব কৃষক পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি সুরক্ষা এবং জীবন-জীবিকার জন্য তা হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। সংস্থাটি এ পর্যন্ত ৩৭টি জেলায় ওই পোকার আক্রমণের প্রমাণ পেয়েছে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির শীতে এই পোকা আক্রমণ করে না। মূলত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময় হচ্ছে এদের আক্রমণের মৌসুম, জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
পোকাটি দমনে আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম গবেষণা কেন্দ্র (সিমিট) ইতিমধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের কোথায় কী পরিমাণে পোকাটি দেখা যাচ্ছে, তা তদারকির জন্য একটি ডিজিটাল ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে তারা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে মিলে তারা এ বিষয়ে একটি অ্যাপও তৈরি করেছে। মাঠপর্যায় থেকে ৫০৫ জন কৃষকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা ওই অ্যাপের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে হালনাগাদ করা হচ্ছে।
সরকারের তরফ থেকে আর্মি পোকা নিয়ন্ত্রণ ও দমনে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯ সদস্যের ওই কমিটি পোকার আক্রমণ ও নিয়ন্ত্রণের অবস্থা নিয়ে সভা করবে। এখন থেকেই সারা দেশে কৃষকের কাছে ওই পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষকের প্রশিক্ষণও দেওয়া শুরু করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
>আর্মি পোকা এক রাতের মধ্যে সব ফসল খেয়ে ফেলতে পারে।
ফেরোমন ফাঁদ ও পানির ফাঁদ দিয়ে পোকাটি দমন করা যায়।
আফ্রিকার ১২টি দেশে আর্মি পোকার কারণে বার্ষিক প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টার ক্ষতি হয়।
জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও আর্মি পোকা নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের প্রধান মো. আবদুর রৌফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাপমাত্রা কম থাকায় এখন ওই পোকার আক্রমণ কম। তবে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ওই সময়ে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে ওই পোকার আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। সে জন্য আমরা কৃষককে সচেতন ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ফেরোমন ফাঁদ দেওয়া শুরু করেছি।’ বিশ্বের যেসব দেশে এই পোকা আক্রমণ করেছে, সেখানে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করেছে বলে উল্লেখ করেন আবদুর রৌফ।
![](https://images.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2020%2F01%2F25%2F9f93833b6e43bf8c3dbd2a56588a0bc7-5e2bdc9bbf029.jpg?auto=format%2Ccompress)
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পোকা দমনে দেশের প্রতিটি জেলার প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিশেষ সতর্ক বার্তা
পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ফসলের জন্য মারাত্মক ওই পোকা এক রাতের মধ্যে একটি জমির পুরো ফসল খেয়ে শেষ করে দিতে পারে। ফলে পোকাটি দেখামাত্র স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ফেরোমন ফাঁদ ও পানির ফাঁদ দিয়ে পোকাটি দমনের উদ্যোগ নিতে হবে।
এফএওর হিসাবে, বিশ্বজুড়ে ৮০টি ফসলের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর আর্মি পোকা বাংলাদেশে ২০১৮ সালে প্রথম দেখা যায়। আর্মি পোকা খাবার উৎপাদনে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। আফ্রিকার ১২টি দেশে আর্মি পোকার কারণে বার্ষিক প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টার ক্ষতি হয় এবং ২০১৭ সালে বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। আফ্রিকার দরিদ্র দেশ বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, ইথিওপিয়া ও কেনিয়ায় ওই পোকার আক্রমণে ভুট্টা ও অন্যান্য দানাদার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে দেশগুলোতে খাদ্যসংকট দেখা দেয়।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন বলেন, ‘আর্মি পোকা বাংলাদেশজুড়ে অনেক প্রান্তিক কৃষকের জীবন-জীবিকা হুমকিতে ফেলেছে। বিপজ্জনক বৃদ্ধি রোধ করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। প্রাদুর্ভাবের বিস্তার রোধে সরকারের সঙ্গে আমাদের সমগ্র উন্নয়ন সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এই মুহূর্তে আমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।’