মহাবিপন্ন চন্দনা টিয়া

চন্দনা টিয়া l ছবি: লেখক
চন্দনা টিয়া l ছবি: লেখক

২০১২ সালের ২৬ মার্চ বিকেলে রমনায় পাখি দেখতে গিয়ে গগন শিরীষগাছের ডালে বসা টিয়ার ডাক শুনতে পাই। গাছের শাখায় যে টিয়া পাখিগুলো ডাকছিল, তাদের মধ্যে কয়েকটির ডাক ছিল ভিন্ন সুরের। ডাক শুনে মনে হয়েছিল এটি আমাদের অন্য কোনো প্রজাতির টিয়া হবে। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে খবর পেলাম বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবের সামনের একটি কম্পাউন্ডের ভেতরে দেখা গেছে মহাবিপন্ন চন্দনা টিয়া, যে পাখি দেখতে আমাদের যেতে হতো লালমনিরহাটের বুড়িমারী সীমান্তের কাছে ও শেরপুরে। লালমনিরহাটের সীমান্তের কাছে একটি বড় শিমুলগাছে প্রতিবছর এ পাখি বাসা করত। শিমুলগাছটি কেটে ফেলা হয়েছে। শেরপুরের যে গ্রামের নারকেলগাছে বাসা করত, সে গাছটিও কেটে ফেলা হয়। সেই পাখি কিনা ঢাকায়! অফিসার্স ক্লাব থেকে রমনা পার্ক দুই মিনিটের হাঁটা পথ। রমনায় অনেক বুনো ও ফলের গাছ রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে রমনা পার্কের ফলফলাদি খেতে চন্দনা টিয়ারা আসবেই।
চন্দনা টিয়া বাংলাদেশের মহাবিপন্ন আবাসিক পাখি। বাসা করার জন্য বড় গাছের অভাব, গাছে ফোকরের অভাব এবং অবাধে বেচাকেনার কারণে এ টিয়া প্রজাতি কেবল দেশের কয়েকটি জেলায় দেখা যেত। ঢাকায় এ পাখির উপস্থিতি জানার পর থেকে চন্দনা টিয়া নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজ শুরু করি। দুই দফায় বাসা করার জন্য কাঠের ও পাইপের তৈরি কৃত্রিম বাসা ঝোলানো হয়, যেখানে এ পাখিটি বাসা করে। কারণ, ঢাকায় বয়সী গাছ কম এবং ফোকরহীন গাছই বেশি। ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া আরবান পরিবেশে চন্দনা টিয়ার সংখ্যা ও জীবনচক্র নিয়ে গবেষণার কাজটি চলমান রয়েছে। ২০১৫ সালে এ পাখির জীবনচক্র নিয়ে আমি একটি আংশিক রচনা উপস্থাপনা করেছি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে।
চন্দনা টিয়া ঘাস-সবুজ, কাঁধে মেরুন পট্টি। লম্বা লেজওয়ালা পাখি। ছেলে পাখি দেখতে মেয়ে পাখির চেয়ে আকারে বড়। ছেলে পাখির গলার পেছনে ও ঘাড়ের পাশে সুস্পষ্ট লালচে-গোলাপি বর্ণের বলয়সহ পুরো দেহ ঘাস-সবুজ। ডানার পালক ও ঢাকনির মধ্যে পরিষ্কার লাল পট্টি চোখে পড়ে। আর্দ্র পাতাঝরা বন, বৃক্ষবহুল এলাকা, উদ্যান, বাগান ও আবাদি জমিতে এ পাখি বিচরণ করে। খাদ্যের তালিকায় আছে জাম, ধান, গম, ভুট্টা, জামরুল, খেজুর, বুনো ফল, ফুলের মিষ্টি রস ও ফুলের কচি অংশ। প্রজনন মৌসুমে নারকেল ও নানা জাতের গাছের ফোকরে বাসা বাঁধে। বাংলাদেশ বাদে ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় এ পাখির বাস রয়েছে।