রূপে–গুণে অনন্য¨ তালমাখনা
তাল কিংবা মাখনাফুল কোনো কিছুর সঙ্গেই সাদৃশ্যপূর্ণ নয়, অথচ নাম তালমাখনা! তবে স্থানীয়ভাবে কুলেখাড়া নামেও পরিচিত। গুরুত্বপূর্ণ এই ভেষজ উদ্ভিদ সম্পর্কে জেনেছি অনেক আগেই। দেখেছি অনেক পরে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে। সেখানকার ভেষজ উদ্যানে বিচিত্র উদ্ভিদের ভেতর ফুলসমেত সুদৃশ্য গাছগুলো নজর কাড়ল। এই উদ্ভিদ উদ্যানটি আমার দেখা আঞ্চলিক বোটানিক্যাল গার্ডেনগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা।
সুযোগ পেলেই উদ্ভিদবৈচিত্র্যের সন্ধানে সেখানে ছুটে যাই। তবে বৃক্ষপ্রেমী যায়েদ আমীনের আগ্রহে সবচেয়ে বেশি গিয়েছি। এই উদ্যানের মোহনীয় প্রাচুর্য ঘিরে তাঁর বিশেষ আবেগ ও ভালোবাসা রয়েছে বলে অনুমান করি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে উদ্যানটির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি নিবিড়ভাবে দেখার সুযোগ হয়েছে। বাগানের পূর্ব প্রান্তের এই সমৃদ্ধ ভেষজ বাগানটি সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।
মূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ তালমাখনা আর তালমূলী—খুবই কাছাকাছি দুটো নাম। তবে দুটো উদ্ভিদই পৃথক পরিবারের। দেখতেও আলাদা। অনেকেই এই দুই উদ্ভিদের সঠিক শনাক্তকরণ নিয়ে বিপাকে পড়েন। চমত্কার ঔষধিগুণের এই গাছ আমাদের খুবই চেনা। উদ্ভিদটির ইউনানি নাম তালমাখনা আর আয়ুর্বেদিক নাম কোকিলাক্ষা। গাছটির মাটির ওপরের অংশে যেসব রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, তা হলো অ্যালকালয়েড, ফাইটোস্টেরল, স্টিগমাস্টেরল, লুপিয়ল, উদ্বায়ী তেল ও হাইড্রোকার্বন। ফুলের মধ্যে এপিজেনিন এবং বীজে তেল ও এনজাইম আছে। এ গাছের মূল ব্যবহার্য অংশ বীজ। এই বীজ পুষ্টিকর, শুক্রবর্ধক ও প্রফুল্লতা ধারক। লিউকোরিয়া, শুক্রমেহ, যৌন দুর্বলতা ও স্নায়বিক দুর্বলতায় বীজ অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষভাবে এই বীজ হজমকারক, বায়ুনিঃসারক ও পাকস্থলীর ব্যথা নিবারক।
শরীরের পুষ্টিসাধন ও সাধারণ দুর্বলতায় ব্যবহার্য অংশ হলো ৩ গ্রাম পরিমাণ বীজচূর্ণ। এই বীজচূর্ণের সঙ্গে ১ গ্রাম পরিমাণ শতমূলীচূর্ণ মিশিয়ে দুধসহ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ও রাত্রে শোবার আগে খেতে হবে। শুক্রমেহ ও লিউকোরিয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার্য অংশ হলো ৩ গ্রাম পরিমাণ বীজচূর্ণ। এই বীজচূর্ণের সঙ্গে ১ গ্রাম পরিমাণ তেঁতুলবীজচূর্ণ মিশিয়ে প্রতিদিন দুবার দুধসহ খেলে উপকার পাওয়া যাবে। স্নায়বিক দুর্বলতার ক্ষেত্রেও ৩ গ্রাম পরিমাণ বীজচূর্ণের সঙ্গে ১ গ্রাম পরিমাণ অশ্বগন্ধাচূর্ণ ও ৩ চা-চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন দুবার করে খেলে উপশম হবে। তবে নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি সেবন সমীচীন নয়।
তালমাখনা (Hygrophyla auriculata) সাধারণত ৫০ সেমি থেকে ১ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কাণ্ড থেকেই বহু শাখাপ্রশাখা বের হয়। ফুলের রং উজ্জ্বল বেগুনি লাল কিংবা বেগুনি সাদা। বীজ ছোট, গোলাকৃতির, দেখতে অনেকটা তিলের মতো, তবে বীজের রং গাঢ় খয়েরি। বীজগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখলে চটচটে কিংবা আঠালো হয়। এর ইংরেজি নাম স্টার থর্ন। গাছটি বাংলাদেশের বিভিন্ন নিম্নভূমি অঞ্চলে, যেখানে বছরে কিছু সময়ের জন্য পানি থাকে, সেখানে পাওয়া যায়। ফুলের মৌসুম হেমন্ত থেকে শীতকাল পর্যন্ত বিস্তৃত। বীজ থেকে চারা হয়।