শঙ্খের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতঘর

‘গত ১৫ দিনে আমার প্রতিবেশী ২০টি পরিবার বসতঘর হারিয়েছে। আমার বসতঘরটিও যেকোনো মুহূর্তে শঙ্খের বুকে বিলীন হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে আছি। ঘরের পাশে হালকা ফাটল দেখা দিয়েছে। আর ১০-১২ ফুট ভাঙলেই আমার বসতঘরটিও নদের গর্ভে হারিয়ে যাবে।’
কথাগুলো বলছিলেন চরতী দুরদুরী উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক ও উত্তর ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আশীষ কুমার দাশ (৭০)। গত সোমবার তাঁর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ও আমিলাইষ ইউনিয়নে শঙ্খের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত এক মাসে প্রায় আড়াই শ বসতঘর নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে হুমকিতে রয়েছে আরও দুই শতাধিক বসতঘর।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিবছর বর্ষা শুরু হলে এই দুই ইউনিয়নের শঙ্খপাড়ের বাসিন্দাদের দিন কাটে আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। প্রতিবছরই নদের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতঘর ও ফসলি জমি। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্লক বসানো না হলে চরতী ইউনিয়নের দ্বীপ চরতী ও আমিলাইষ ইউনিয়নের পশ্চিম আমিলাইষ গ্রাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার চরতী ইউনিয়নের উত্তর তুলাতুলি, তুলাতুলি, মধ্যম চরতী, উত্তর ব্রাহ্মণডাঙ্গা, দক্ষিণ ব্রাহ্মণডাঙ্গা ও দ্বীপ চরতী এলাকায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটারে কেবলই নদের ভাঙনের চিহ্ন। উত্তর তুলাতুলি-ঘাটঘর সড়কটির অন্তত আধা কিলোমিটার নদের বুকে হারিয়ে গেছে। আমিলাইষ ইউনিয়নের সরওয়ার বাজার, মধ্যম আমিলাইষ, পশ্চিম আমিলাইষেও ভাঙনের চিহ্ন। এখানে কোনো বসতঘরের পুরোটা আবার কোনো বসতঘরের আংশিক নদের গর্ভে হারিয়ে গেছে।
নদের ভাঙনে বসতঘর হারানো চরতী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চোখের সামনেই তাঁদের পুরোনো বাড়ি, ভিটা, গাছপালা নদে গিলে খেয়েছে। নতুন বাড়ির একাংশও নদের গর্ভে হারিয়ে গেছে। তিনি আরও বললেন, ‘আপাতত ব্যক্তিগত উদ্যোগে জিআই ব্যাগ কিনে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। নতুন বাড়িটি হারিয়ে গেলে কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছি না।’
আমিলাইষ ইউপির চেয়ারম্যান এইচ এম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, গত এক মাসে শঙ্খের ভাঙনে তাঁর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের অন্তত ৯০টি বসতঘর ও প্রায় ১০০ একর ফসলি জমি হারিয়ে গেছে। হুমকিতে আছে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আরও ৫৫টি পরিবার। তারা প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পটিয়া কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী অনুপম দাশ প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সাংসদসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শঙ্খ নদের ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। শঙ্খ নদের ভাঙনকবলিত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরসিসি ব্লক বসানোর একটি প্রকল্প তৈরি করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুপম দাশ আরও বলেন, ‘আশা করছি, অল্প কিছু দিনের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া গেলে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করতে পারব।’