
গাছের গোড়া থেকে শুরু করে ডালপালা পর্যন্ত ঝুলন্ত পুষ্পমঞ্জরিতে থোকায় থোকায় ফল আসে। প্রতিটি পুষ্পমঞ্জিরতে পাঁচ থেকে পঞ্চাশটি ফল দেখা যায়। ফলের রং হলুদ ও ভেতরে দুই থেকে পাঁচটি বীজ হয়, বীজের গায়ে লাগানো রসাল অংশ খাওয়া হয়ে থাকে। জাতভেদে টক বা টকমিষ্টি স্বাদের এ ফলটির নাম লটকন।
Euphorbiaceae পরিবারের এ ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea sapida। দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ কিছু জায়গায় এটি বুনোগাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। ইংরেজিতে বার্মিজ গ্রেপ নামে পরিচিত হলেও আমাদের দেশে এ ফলটি বুবি, বুগি, লটকা, লটকো, নটকো ইত্যাদি নামে পরিচিত। মার্চ মাসের দিকে লটকনগাছে ফুল আসে এবং ফল পরিপক্ব হতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগে। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে লটকন বাজারে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে একসময় অপ্রচলিত ফলের তালিকায় ছিল লটকন। কিন্তু এখন চাহিদা বাড়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। নরসিংদী জেলার শিবপুর, বেলাব, মনোহরদী ও সদরে প্রচুর পরিমাণে চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া গাজীপুর, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
লটকনের রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার। পুষ্টিমানের দিকেও লটকন অনেক সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনে ১৭৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৬৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৩৭ মিলিগ্রাম শর্করা, ১৭৭ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম ও ১০০ মিলিগ্রাম লৌহ রয়েছে। এ ছাড়া লটকনের বীজ মূল্যবান রং উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। সিল্ক, তুলা ও পোশাকশিল্পে এ রং ব্যবহার করা হয়।
লটকনের বংশবিস্তার দুভাবে হয়ে থাকে। বীজ ও অঙ্গজ পদ্ধতিতে। লটকনের পুরুষ ও স্ত্রী-গাছ আলাদা হয়ে থাকে। বীজ দ্বারা বংশবিস্তার করলে স্ত্রী-গাছের চেয়ে পুরুষ-গাছের সংখ্যা বেশি হয় এবং ফল পেতে পাঁচ থেকে সাত বছর সময় লাগে। অঙ্গজ তথা কলমপদ্ধতি ব্যবহারে তিন বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায় ও গাছ খাটো হয় বিধায় ফল তোলা সহজ হয়। একটি বয়স্ক গাছ থেকে ১০০–১৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি লটকন ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে রাজধানীতে এর মূল্য প্রতি কেজি ১০০ টাকার বেশি।
লটকন ফল চাষে অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো এরা ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মাতে পারে। বাড়ির আঙিনায় সহজে লটকন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারেন। দেশে ফল ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে লটকন জনপ্রিয় ফলের স্থান দখল করতে পারে বলে জানালেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, লটকনের চাষ বৃদ্ধির ফলে বেশ কয়েক বছর ধরেই এ বিভাগের শিক্ষকেরা মাঠপর্যায়ে বাগান পরিদর্শন ও কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এর চাহিদা বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিক চাষাবাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।