স্বর্ণলতা

স্বর্ণলতার ফুল, নরসিংদী থেকে তোলা l ছবি: লেখক
স্বর্ণলতার ফুল, নরসিংদী থেকে তোলা l ছবি: লেখক

‘হয়তো বা বনচ্ছায়া লতাগুল্ম
পল্লবের তলে
ঘুমায়ে রহিবে তুমি নীল শষ্পে
শিশিরের দলে;’
-জীবনানন্দ দাশ
ভোরের কুয়াশা কাটেনি সেদিন। শিশিরসিক্ত দূর্বা ঘাসে পথে বেরিয়ে পড়ি। ভোরের পাখিরা ততক্ষণে নেমে পড়েছে ফসলকাটা ধানখেতে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে সেদিন সকালের গন্তব্য কিশোরগঞ্জ হয়ে নরসিংদী। পথে পথে দেখলাম অনেক পাখির উড়ে যাওয়া। দেখা হলো পথের ধারে বেড়ে ওঠা নানান বুনো তরুলতার সঙ্গে, যাদের কোনোটিতে ফুটেছে ফুল আবার কোনোটিতে ধরেছে ফল। কোনো বৃক্ষের পাতায় জমা পড়েছে পথের ধুলা, কোনো পাতায় ভোরের শিশির জমে আছে।
আমাদের দেশের গ্রামের পথের পাশে কোনো বড় কিংবা ছোট গাছের ডালে জড়িয়ে থাকে হলদে-সবুজাভ বর্ণের একধরনের লতা। সেই লতার নেই কোনো পাতা, নেই কোনো শিকড়। তবে শীতের সময় এ লতায় ফোটে দুধসাদা রঙের ছোট ঘণ্টাকার ফুল। ফুল সুগিন্ধও বটে। মধুর জন্য পিঁপড়া আসে ফুলে ফুলে। কমলা বর্ণের পুংকেশরগুলো সাদা রঙের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন লাগে। তবে এই সৌন্দর্য দেখতে হলে যত সম্ভব কম দূরত্ব থেকে দেখতে হবে। নরসিংদী গিয়ে গ্রামের এক পথপাশে স্বর্ণলতার ফুল দেখতে পাই।
স্বর্ণলতা শুধুই ধারককে জড়িয়ে বেড়ে ওঠে। ধারক হতে হবে কোনো জীবন্ত গাছ। কখনো কখনো কোনো গাছকে এ লতা জড়িয়ে ধরে ঢেকে ফেলে। আমরা সবাই হয়তো এ লতাটিকে চিনি। কোথাও এটি শূন্যলতা বা অলোকলতা হিসেবে পরিচিত। নেপালে এই লতাকে আকাশবেলি নামে ডাকা হয়। এটি আসলে একটি পরজীবী লতা। যে গাছের ওপর বেড়ে ওঠে, সেই কাছের কাণ্ড থেকে খাবার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে। ফুল ছোট এবং ফুলের বৃতি ২ মিলিমিটার, দল ৩ থেকে ৫ মিলিমিটার। এই লতা বাংলাদেশের সব জেলাতেই দেখা যায়। ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ উষ্ণমণ্ডলীয় দেশে এটির বিস্তৃতি রয়েছে। স্বর্ণলতার ইংরেজি নাম Giant dodder। বৈজ্ঞানিক নাম Cuscuta reflexa। এই লতার হস্টেরিয়া নামক চোষক অঙ্গ থাকে। চোষক অঙ্গের মাধ্যমে এটি পোষক উদ্ভিদ থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে। এটি একবর্ষজীবী লতা। আমাদের দেশে কয়েকটি প্রজাতি আছে। এ লতা অনেক শাখা লতা তৈরি করে পুরো গাছ জড়িয়ে ফেলে খুব কম সময়ে। ফুল থেকে ফল হয়। বীজ থেকে বংশবৃদ্ধি ঘটে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকার আদিবাসীদের কাছে লতাটি লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।