হাওরে হাসছে সূর্যমুখী

হাওরে ফুটেছে সূর্যমুখী। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
হাওরে ফুটেছে সূর্যমুখী। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পুরো পৃথিবী যখন ধুঁকছে, প্রকৃতি তখন মেলে ধরেছে নিজের রূপ। সম্প্রতি হাকালুকি হাওর ঘুরে এসে সে রূপের কিছুটা তুলে ধরার লোভ সামলানো কঠিন হলো। হাওরে ফুটেছে সূর্যমুখী। নীল আকাশের নিচে হলুদের খেলা। সকাল সকাল এ খেলা দেখতেই হাকালুকি হাওরের দিকে আমাদের গন্তব্য। মহাসড়ক থেকে নেমে আঁকাবাঁকা পথ। মোটরসাইকেল চালনায় দক্ষ হতে হয় এই সড়ক দিয়ে চলতে। পথের ধারে চোখে পড়ল গরু-মহিষের পাল নিয়ে রাখাল যাচ্ছেন হাওরের বিস্তীর্ণ জমির ঘাস খাওয়াতে। আমের মুকুলে উড়ছে মৌমাছি। এবড়োখেবড়ো পথ একসময় শেষ হয়ে যায়। সমতলে কেবল সবুজ ঘাস। সেখানেই পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এর ওপরে উঠে চারদিকে চোখ দিই। এখানে-সেখানে দেখার চেষ্টা করি ক্যামেরার লেন্স দিয়ে।

সূর্যমুখীর ওপর বসে আছে শ্যামা পাখি। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
সূর্যমুখীর ওপর বসে আছে শ্যামা পাখি। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

হঠাৎ চোখ আটকে যায় দূরে থাকা সূর্যমুখীর বাগানে। হাওরের ওপর এই ফুলের বাগান যেন বাড়তি সৌন্দর্য। দ্রুতই নেমে যাই। ছুটতে থাকি বাগানের দিকে। ফিঙে পাখি বসেছে সূর্যমুখীর ওপর। কোমল রোদের আলোতে ফুলগুলো যেন হাসছে। স্থানীয় কয়েকজন তরুণ এসে মুঠোফোন দিয়ে ছবিও তুলছে। আমরাও ক্যামেরায় ক্লিক করি। ফুলবাগানে মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি এসে আবদার করলেন, ‘স্যার ফুলের লগে আমার ছবি নেন, ভালো হইব।’

সরকারিভাবে প্রণোদনা পেয়ে হাওরের কৃষকদের কেউ কেউ সূর্যমুখীর চাষ শুরু করেছেন। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
সরকারিভাবে প্রণোদনা পেয়ে হাওরের কৃষকদের কেউ কেউ সূর্যমুখীর চাষ শুরু করেছেন। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

হাওরের জমিতে সাধারণত বোরো ধানের চাষই বেশি হয়। কিন্তু অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে প্রায় প্রতিবছর ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে হাওরপারের কৃষকেরা বিকল্প শস্য চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এবার সরকারিভাবে প্রণোদনা পেয়ে তাঁদের কেউ কেউ সূর্যমুখীর চাষ শুরু করেছেন।

এবার রবি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৪০ জন কৃষককে রাজস্ব প্রণোদনা হিসেবে সূর্যমুখীর বীজ দেওয়া হয়েছে। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
এবার রবি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৪০ জন কৃষককে রাজস্ব প্রণোদনা হিসেবে সূর্যমুখীর বীজ দেওয়া হয়েছে। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানায়, এবার রবি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৪০ জন কৃষককে রাজস্ব প্রণোদনা হিসেবে সূর্যমুখীর বীজ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে এটির চাষ হয়েছে।
আলাপচারিতায় কৃষক শাহজাহান বললেন, প্রতিবছরই তাঁরা বোরো ধানের আবাদ করেন। কিন্তু, প্রকৃতি রুষ্ট হলে প্রায়ই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয় না। বানের জলে ভেসে যায় স্বপ্ন। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁকে এ ব্যাপারে উৎসাহ জুগিয়েছেন। দিচ্ছেন নিয়মিত পরামর্শ। বীজ রোপণ থেকে শুরু করে ফুল ফোটা ও পুনরায় বীজ সংগ্রহে মোট ১১০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে। তবে বীজ সংগ্রহের পর কী করবেন সেটা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। কারণ, বীজ থেকে তেল তৈরির কোনো যন্ত্র¿তাঁদের নেই।

বীজ সংগ্রহের পর কী করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
বীজ সংগ্রহের পর কী করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারিভাবে সূর্যমুখীর তেল তৈরির একটি যন্ত্র কেনার ব্যাপারে তাঁরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে সরিষা বীজ ভাঙানোর যন্ত্রেও সূর্যমুখীর বীজ ভাঙিয়ে তেল সংগ্রহ সম্ভব।

বীজ রোপণ থেকে শুরু করে সূর্যমুখী ফুল ফোটা ও পুনরায় বীজ সংগ্রহ করতে মোট ১১০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
বীজ রোপণ থেকে শুরু করে সূর্যমুখী ফুল ফোটা ও পুনরায় বীজ সংগ্রহ করতে মোট ১১০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

কৃষি কর্মকর্তা বলেন, সূর্যমুখীর তেলে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই। এ ছাড়া ঝাঁঝযুক্ত ক্ষতিকর লিনোলিক অ্যাসিডও থাকে না। বরং ওই তেলে স্বাস্থ্যকর ‘ইরোসিক অ্যাসিড’ থাকে। এক কেজি সূর্যমুখীর বীজে ৪০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম তেল পাওয়া যায়। সরিষায় মেলে ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম। ফলে সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের বেশ আগ্রহ রয়েছে।