'সিমেন্টে কয়লার ছাই মেশালে ক্যানসার মহামারি রূপ নেবে'
![রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল। ছবি: প্রথম আলো](https://images.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2018%2F04%2F13%2Fdd6fcc0ccb14213fbe149afac5b195c1-5ad0b0ffa8a95.jpg?auto=format%2Ccompress)
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা পোড়ানো ছাই কেনার জন্য সিমেন্ট কারখানার মালিকেরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অথচ দেশের সিমেন্টের সবগুলো ব্র্যান্ড ঢালাওভাবে প্রচার করে থাকে তাদের সিমেন্টে কোনো ফ্লাই অ্যাশ (কয়লা পোড়ানো ছাই) নেই। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কয়লা পোড়ানো ছাই বেশি তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়। এ ছাই ব্যবহার করলে ঘরে ঘরে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়বে।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) ৫৭টি সংগঠনের নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
‘ধ্বংসোন্মুখ সুন্দরবন রক্ষায় ইউনেসকোর জরুরি পদক্ষেপ দাবি’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, ভারতের গ্রিন ট্রাইব্যুনালের এক রায়ে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলা হয়েছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে ছাই বের হয়, তাতে তেজস্ক্রিয়তার যে মাত্রা থাকে, তা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয়তা থেকে অনেক বেশি। অথচ আমাদের দেশের সিমেন্ট কারখানায় রামপালের কয়লা পোড়ানো ছাই ব্যবহার করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। যদি অতি তেজস্ক্রিয় এই ছাই বাংলাদেশের সিমেন্ট কারখানাগুলো ব্যবহার করে, তাহলে ঘরে ঘরে ক্যানসারের মতো ঘাতক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেন, ইউনেসকোর ৪১তম সভায় তারা পরিষ্কার বলেছিল, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রভাব নিয়ে সুন্দরবন এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একটি কৌশলগত পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (এসইএ) না করা পর্যন্ত ওই এলাকায় সব ভারী শিল্পকারখানা ও স্থাপনা নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে হবে। এই ভারী শিল্পকারখানার মধ্যে অবশ্যই রামপাল পড়ে। সরকার ইউনেসকোর এ অনুরোধ রাখেনি। সে কারণে আমরা ১২ এপ্রিল ইউনেসকোকে চিঠি দিয়ে বলেছি, আগামী জুলাই মাসে ইউনেসকোর ৪২তম অধিবেশনে সুন্দরবন যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যাচ্ছে, তা নিয়ে যেন তারা আলোচনা করে।
‘ইউনেসকোকে ১২ এপ্রিল চিঠি দিয়েছি—সেটি জানাতেই আজকের এই সংবাদ সম্মেলন’ তথ্য উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, পায়রাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। সেই কেন্দ্রের কারণে আমাদের দেশের ইলিশের অভয়ারণ্য নষ্ট হবে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনে অ্যাসিড বৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইউনেসকো বলেছিল, সুন্দরবনের নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির জন্য উজান দেশের সঙ্গে যৌথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে, বনের নদীগুলোতে নৌপরিবহন বৃদ্ধি ও ড্রেজিং করার আগে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করতে হবে। কিন্তু সরকার এসব পরামর্শ না মেনে বরং তার উল্টো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সে কারণে আমাদের উদ্বেগের কথা ইউনেসকোকে জানিয়েছি।’
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ও বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আবদুল মতিন, বাপার যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল ও আলমগীর কবির এবং সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. মোজাহেদুল ইসলাম মুজাহিদ।