পাহাড় কাটা বেশি বায়েজিদ ও আকবরশাহ এলাকায়

ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনীতিক, পুলিশসহ প্রভাবশালীরা জড়িত। জরিমানা করেই বেশির ভাগ মামলা নিষ্পত্তি হয়।

পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ ১ নম্বর জিল এলাকায়ছবি: জুয়েল শীল

২০০০ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা এলাকার পরিমাণ ছিল ৬৭৯ হেক্টর। আর ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৯৫ হেক্টরে। পাহাড় কাটা নিয়ে ‘হিল কাটিং ইন অ্যারাউন্ড চিটাগং সিটি’ নামের একটি গবেষণায় গুগল আর্থের ছবি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবছর যে হারে পাহাড় নিধন চলছে তাতে চট্টগ্রাম শহরে পাহাড় কাটা এলাকা বেড়ে এখন দুই হাজার হেক্টর হয়েছে বলে মনে করেন গবেষণা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে ২০১২ সালের পর আর গবেষণা হয়নি বলে পাহাড় কাটা এলাকার প্রকৃত তথ্য জানা যায়নি।

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘করব ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখব মরুময়তা, অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’। কিন্তু ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ভয়াবহ পাহাড়ধসের পর থেকে প্রশাসন বারবার বলে আসছে, বেদখল হওয়া পাহাড় উদ্ধার করা হবে। বাস্তবে দিন দিন পাহাড় কাটা ও দখলের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

গত এক বছরে পাহাড় কাটার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামে মামলা করেছে ১২টি। তার আগের বছর মামলা হয় ২২টি। ২০ বছরে মামলা হয়েছে শতাধিক। আবার অধিদপ্তরের অগোচরে রয়ে যায় অনেক পাহাড় কাটার ঘটনা। বায়েজিদ ও আকবরশাহ এলাকায় বেশি পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটছে। প্রায় ৮০ শতাংশ মামলা হয়েছে এ দুটি এলাকায়।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, পাহাড় কাটার খবর পেলেই অভিযান চালানো হয়। প্রতি মাসেই মামলা করা হয়। পাহাড় কাটার সঙ্গে বিভিন্ন পেশার লোকেরা জড়িত। এটি বন্ধ করতে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন তিনি।

বেশি পাহাড় কাটা দুই এলাকায়

আবাসন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পেটে ঢুকছে চট্টগ্রামের পাহাড়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৫ বছরে শহরের সবচেয়ে বেশি পাহাড় নিধন হয়েছে বায়েজিদ থানা ও পাহাড়তলী বা আকবরশাহ এলাকায়।

এখনো আকবরশাহ ও বায়েজিদ এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে। আকবরশাহ এলাকায় এখন পাহাড় কাটার মূল হোতা আওয়ামী লীগের নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল হক ওরফে জসিম। পাহাড় কাটার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

এ ছাড়া বায়েজিদ থানা এলাকার রউফাবাদ, অক্সিজেন, ষোলশহর, আরেফিন নগর, নাসিরাবাদ, পলিটেকনিক, কূলগাঁও, জালালাবাদ এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে। এখানে পাহাড় কাটার পেছনে বায়েজিদের জালালাবাদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহার উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুদ্দিনসহ কয়েকজনের নাম এসেছে। এই দুজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া বায়েজিদ থানার নাগিন পাহাড় আবার কাটার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর বাহার উদ্দিন, শামসুদ্দিনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো মামলা করে।

চিহ্নিত ২৬ স্থানেও পাহাড় কাটা

আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসন এ বছরের শুরুর দিকে নগরের পাহাড়ি ২৬টি স্থানকে চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড দিয়েছিল। এর মধ্যে ১৬টি ছিল উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে। চিহ্নিত স্থানের মধ্যে হারবাতলী, জয়ন্তিকা উত্তর লেক সিটি, বিজয় নগর, গাউছিয়া লেক সিটি (নাইচ্চাঘোনা) এলাকায় সড়ক নির্মাণের নামে পাহাড় কাটা চলছে।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ সভায় বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরের ২৬টি পাহাড়ে ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার অবৈধভাবে বসবাস করছে। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মুহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাহাড় চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের ওখান থেকে সরাতে অভিযানও চালানো হয়।