সাদা পরির মতো ফুল

গাজীপুরের শ্রীপুরে শালবনে ফুটেছে সাদা রঙের স্নিগ্ধ ফুলটি
ছবি: লেখক

শালবনের ভেতরে খানিকটা পথ পেরিয়ে থামতে হলো আমাদের। তারপর গাড়ি রেখে একটি ছোট কালভার্ট পার হয়ে হাঁটতে থাকি। সামনে সামান্য পথ। গন্তব্য—বিন্দুবাড়ির বেনু ভিটা। সেখানে, অর্থাৎ গাজীপুরের শ্রীপুরের এই গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে দেশের প্রথম মানমন্দির। নিঃসন্দেহে একটি মহৎ উদ্যোগ।

এ উদ্যোগের প্রাণপুরুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধা বেনু শুধু বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রেই নন, প্রকৃতি সংরক্ষণেও একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। তাঁর আহ্বানেই ‘গাছ দেখা গাছ চেনা’ অনুষ্ঠানের সম্ভাব্যতা দেখতে এসেছি এখানে। শালবন এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক আবাস, যেখানে প্রায় সারা বছর নানা রকম পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এ পরিবর্তন বনতল থেকে শুরু করে বনের উপরিভাগ পর্যন্ত দৃশ্যমান। এ যাত্রায় বেশ কিছু বুনো ফুলের ভিড়ে ব্যতিক্রম মনে হলো শুভ্র রঙের ফুলটি।

আগে কখনো দেখলেও খুঁটিয়ে দেখা হয়নি। সাধারণ চোখে যা দেখতে অনেকটা কলমি ফুলের মতোই। তবে আদতে এটি কলমি ফুল নয়। আমাদের উদ্ভিদবিষয়ক বইয়ে স্থানীয় কোনো নামও পাওয়া গেল না।

সাদা পরির মতো ফুলটি মূলত Aniseia martinicensis ভেষজ লতার একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। উপক্রান্তীয় অঞ্চল, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আমেরিকা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া ও আফ্রিকার তৃণভূমিসহ আর্দ্র থেকে শুষ্ক এবং অর্ধশুষ্ক অঞ্চলে এই গাছ দেখা যায়। এর পাতা ও নরম কাণ্ড পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিপূরক সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।

নিজস্ব আবাসের বাইরে খুব একটা জন্মাতে দেখা যায় না বলে এ গাছকে বিরল মনে করা হয়। সাধারণত বনতল থেকে ৪৯৯ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত অনায়াসেই এই লতা পৌঁছাতে পারে। এ গাছের কাণ্ড মসৃণ বা অল্প রোমযুক্ত হতে পারে। পাতার অগ্রভাগ ক্রমান্বয়ে সরু ও তীক্ষ্ণ। গোড়ার দিকে খানিকটা চওড়া এবং গভীরভাবে বিভক্ত।

মঞ্জরিদণ্ড পাতা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর, কোমল ও দীর্ঘ রোমযুক্ত। পুষ্পবৃন্ত বাইরের বৃত্যাংশ থেকে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র, বৃত্যাংশ শিরাবিন্যাসবিশিষ্ট, বাইরের বৃত্যাংশ ৩টি, দেড় থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা। পাতার কক্ষে ফানেলের মতো সাদা রঙের একক ফুল ফোটে। পুংকেশর পাঁচটি, পুংদণ্ডের নিচের অংশ রোমশ।

আমাদের দেশে সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত ফুল দেখা যায়। ফল ডিম্বাকার, প্রায় দুই সেন্টিমিটার লম্বা এবং বর্ধিত বৃতির মাধ্যমে প্রসারিত হয়। কালো রঙের বীজগুলো মসৃণ, কিনারা পশমি ধরনের।

এ গাছের পাতার রস পিত্তঘটিত অজীর্ণ রোগ উপশমে বেশ কার্যকর। দেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাঙামাটিসহ বিভিন্ন পত্রমোচী বনে এ গাছ জন্মে।

মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক