উদ্ভিদের লাল তালিকা
৭ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্ত
বিপন্ন উদ্ভিদের অস্তিত্ব রক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংরক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করার আহ্বান আইইউসিএনের।
দোলনচাঁপা ফুলের গাছ হয়তো অনেকেই দেখে থাকবেন। কিন্তু ফিতাচাঁপা নামে যে দেশে এক প্রজাতির ফুলের গাছ ছিল, তা খুব বেশি মানুষের জানা নেই। কারণ, সেটি এখন ইতিহাস। উদ্ভিদের ওই প্রজাতিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে বন বিভাগ। মানে এটি গত এক শ বছরের মধ্যে দেশের কোথাও আর দেখা যায়নি। বিলুপ্তির তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও ছয় প্রজাতি। আর মহাবিপন্ন অবস্থায় আছে পাঁচ প্রজাতির উদ্ভিদ। অর্থাৎ এগুলো সংরক্ষণে জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হলে তা দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের উদ্ভিদ প্রজাতিগুলোর মধ্যে কোনটি কেমন অবস্থায় আছে, তা বোঝার জন্য করা লাল তালিকা বা রেড লিস্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এক হাজার প্রজাতির উদ্ভিদের ওপর করা ওই জরিপে দেখা গেছে, এর ৩৯ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে বিপদগ্রস্ত আছে, অর্থাৎ বিপদাপন্ন। ওই জরিপের বাইরে দেশের আরও প্রায় তিন হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ রয়ে গেছে, যেগুলোর ওপরে জরিপ করা দরকার বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা আইইউসিএনের করা এই উদ্ভিদের লাল তালিকা প্রণয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশের চারজন জ্যেষ্ঠ উদ্ভিদবিজ্ঞানী। দেশে একাধিকবার প্রাণীদের লাল তালিকা তৈরি হলেও উদ্ভিদের তালিকা এই প্রথম তৈরি হলো। বিলুপ্তির তালিকায় নাম লেখানো অন্য প্রজাতিগুলো হচ্ছে কুড়াজিরি, ভানু দেয়পাত, গোলা অঞ্জন, সাত সারিলা, থার্মা জাম ও মাইট্রাসিস। এ ছাড়া তালিপাম জাতের গাছ দেশের বনভূমিতে ছিল। কিন্তু এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য টিকে আছে। ফলে একেও প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আর মহাবিপন্ন, মানে সংরক্ষণে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে তা দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাবে, এমন পাঁচটি প্রজাতির উদ্ভিদ চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেগুলো হলো বাঁশপাতা, বনখেজুর, বালবোরক্স, লম্বা ট্রায়াস অর্কিড ও বলগাছ। গবেষক ও বিজ্ঞানীরা সারা দেশে জরিপ চালিয়ে কয়েকটি স্থানে ওই গাছগুলো খুব অল্পসংখ্যক টিকে আছে বলে দেখতে পেয়েছেন।
লাল তালিকা মূল্যায়নের ফলাফল অনুযায়ী, এক হাজার উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে ৭টি বিলুপ্ত, ৫টি মহাবিপন্ন, ১২৭টি বিপন্ন, ২৬২টি সংকটাপন্ন, ৬৯টি প্রায় সংকটাপন্ন, ২৭১টি পরিবেশে ভালোমতো টিকে আছে এবং ২৫৮টি উদ্ভিদ প্রজাতির ব্যাপারে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
গতকাল রাজধানীর বন ভবনে আয়োজিত এক কর্মশালায় ওই তালিকা তুলে ধরা হয়। তাতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন দেশের মহাবিপদাপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতিগুলো সংরক্ষণে জরুরি পদক্ষেপ নিতে বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং অন্যান্য বিপন্ন উদ্ভিদের অস্তিত্ব রক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংরক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই ধরনের প্রজাতির পূর্ণ তথ্য জানার জন্য দেশের অবশিষ্ট প্রায় তিন হাজার উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ সম্পন্ন করা হবে। নির্দিষ্ট সময় পরপর এই তালিকা হালনাগাদ করা হবে। সংকটাপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির সুরক্ষার জন্য বিদ্যমান আইন ও প্রবিধানমালার যথাযথ বাস্তবায়ন করার ব্যাপারেও সুপারিশ করা হয়।
চূড়ান্ত ফলাফলসহ মূল প্রবন্ধ যৌথভাবে উপস্থাপন করেন সমীক্ষা দলের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. ওলিউর রহমান ও অধ্যাপক সালেহ আহমদ খান।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক সালেহ আহমদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বেশির ভাগ উদ্ভিদ কোনো না কোনোভাবে আমাদের কাজে লাগে। এগুলো আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্যেরও অংশ। এর আগে নগরায়ণ ও কৃষিকাজ করতে গিয়ে আমরা অনেক ধরনের উদ্ভিদ এই দেশ থেকে হারিয়েছি। ফলে এই সংকটাপন্ন প্রজাতিগুলোকে রক্ষায় আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’
আইইউসিএন বাংলাদেশের হিসাবে, বিশ্বে প্রায় পাঁচ লাখ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৯৫ হাজার উদ্ভিদকে শনাক্ত করেছে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত সবচেয়ে বড় হারবেরিয়াম কিউ হারবেরিয়াম। উদ্ভিদের প্রজাতি সংরক্ষণবিষয়ক রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের হিসাবে, দেশে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উদ্ভিদের প্রজাতি ছিল ৩ হাজার ৮৪০টি। যদিও পরে আরও ১০টি উদ্ভিদ প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়।