রাজঘণ্টা ফুলের স্নিগ্ধ শোভা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে রাজঘণ্টা ফুল
ছবি: লেখক

হঠাৎ অদ্ভুত এক খেয়াল চাপল মাথায়। ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে নেপালের কাকরভিটা সীমান্ত দিয়ে সড়কপথে কাঠমান্ডু রওনা হলাম। সীমান্ত পেরিয়ে কাঠমান্ডুগামী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বুঝতে পারি, ভ্রমণ ততটা আরামদায়ক হবে না! বাসগুলোর অবস্থা যাচ্ছেতাই। সন্ধ্যার পরপরই গাড়ি ছাড়ল।

কাঠমান্ডু পৌঁছাতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেল। সুবিশাল আর সুউচ্চ পাহাড়ের গা বেয়ে গাড়ি রাজধানী শহরের শেষ গন্তব্যে আমাদের পৌঁছে দিল। তখন পাহাড়ের গায়ে বসে থাকা মেঘগুলো ছিল নাগালের মধ্যে! হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে দেখা যায় এমন। বাড়তি হিসেবে ছিল দুই পাশে বিচিত্র উদ্ভিদের সমাবেশ—বনকাঞ্চন, অর্কিড, বাসক—আরও কত কী! মেঘলা আকাশ। একটু আগেই একপশলা বৃষ্টি হয়েছে।

পরের দিন ক্যামেরা নিয়ে বের হলাম। শহরের পরিত্যক্ত ডোবা ও ঝোপজঙ্গলের ভেতরে মাইকের মতো দেখতে ঝুলন্ত কিছু ফুলের গাছ চোখে পড়ল। ছোট গাছগুলো সাদা রঙের অসংখ্য ফুলে ভর্তি। এমন সুন্দর ফুল আগে কখনো দেখিনি। অথচ এখানে অবহেলা–অনাদরে ফুটে আছে। ডোবা-নালার ময়লা–আবর্জনা উপেক্ষা করেই অনেক ছবি তুলি। দেশে ফিরে ছবিগুলো বইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দেখি। বিভিন্ন আকরগ্রন্থের তথ্য যাচাই করি। একসময় আবিষ্কার করি, এ তো রাজঘণ্টা! সতীর্থরা জানতে চান, কোথায় পেলে এমন ফুল? তাঁদের কাঠমান্ডুর কথা বলি। জীবদ্দশায় অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা জানিয়েছিলেন, রমনা পার্কে একটি গাছ লাগিয়েছেন তিনি। ফুল ফোটার জন্য অপেক্ষা করছেন। পরে আমিও দেখেছি সেই গাছ; কিন্তু ফুল চোখে পড়েনি। সিঙ্গাপুরের সুউচ্চ ভবনগুলোর সামনে সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে লাগাতে দেখেছি। বড় আকৃতির ফুল দেখেছি ওয়াশিংটন ডিসির একটি উদ্যানে। সেখানে রাজঘণ্টার ছবি দেখে শুধু ভালোই লাগেনি, চমৎকৃতও হয়েছি। পরে অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে রাজঘণ্টা ফুল দেখেছি।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাধারণত বেড়া তৈরির জন্য এ গাছের আবাদ হতো। আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বিভিন্ন পার্ক, উদ্যান ও পথের পাশে এই গাছ রোপণ করা যেতে পারে।