দেশে বাড়িঘর নির্মাণ এবং সরকারি ভবনের দেয়াল, সীমানাপ্রাচীর, গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে পোড়া মাটির ইট ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ইট তৈরির জন্য কৃষিজমির ওপরের অংশ থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়। এতে কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হয়। ইট পোড়ানোর সময় ভাটার চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়া পরিবেশদূষণের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়।

তাই প্রচলিত ইটের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি উন্নয়নকাজে ব্লক ইট ব্যবহারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত আইনে সরকারি নির্মাণ, মেরামত ও সম্প্রসারণের কাজে ব্লক ইটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এ আইন অনুযায়ী, ব্লক ইট হচ্ছে বালু, সিমেন্ট, ফ্লাই অ্যাশ বা অন্য কোনো উপাদানে তৈরি করা ইট, যা মাটি ছাড়াই এবং না পুড়িয়ে তৈরি করা হয়।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ব্লক ইট ব্যবহারের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে বলা হয়, সরকারি নির্মাণকাজে ধাপে ধাপে ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়ানো হবে। এ জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে সরকারি নির্মাণকাজের ১০ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার করতে হবে।

সরকারের ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন সব সরকারি নির্মাণকাজে অন্তত ৬০ শতাংশ ব্লক ইট ব্যবহার করার কথা। কিন্তু বাস্তবে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি সামান্যই। বর্তমানে সরকারি নির্মাণকাজের কত শতাংশে ব্লক ইটের ব্যবহার হচ্ছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। সরকারি নির্মাণকাজের বড় অংশ বাস্তবায়ন করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সংস্থাগুলোর নির্মাণকাজে এখনো প্রচলিত ইটের ব্যবহার বেশি।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গবেষণা ইউনিট) আলী আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি নির্মাণকাজে এখনো বড় পরিসরে ব্লক ইটের ব্যবহার শুরু করা যায়নি। দেশের সব এলাকায় ব্লক ইট পাওয়াও যায় না। কিছু ক্ষেত্রে ব্লক ইটের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কিছু কাজে ব্লক ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্লক ব্যবহারে আরও সময় লাগবে, তবে চেষ্টা আছে।

সরকারি নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে পণ্যের দাম নির্ধারিত হয় ‘রেট শিডিউল’-এর মাধ্যমে। যেমন এক টন রড বা সিমেন্ট কিংবা পাথরের দাম কত হবে, তা রেট শিডিউলে নির্ধারণ করা থাকে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ বিভাগ থেকে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর রেট শিডিউল করা থাকে। গত ১১ ডিসেম্বরের সমন্বয় সভায় জানানো হয়, সরকারি রেট শিডিউলে ব্লক ইটের বিষয়ে উল্লেখ করা নেই। এরপরও বিভিন্ন সংস্থা স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের প্রকল্পের কিছু কাজে ব্লক ইট ব্যবহার করছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সারোয়ার বারী প্রথম আলোকে বলেন, ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর রেট শিডিউলের বিষয়ে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। রেট শিডিউলের বিষয়টি অর্থ বিভাগ অনুমোদনে দেয়। প্রস্তাব এলে তা অর্থ বিভাগে পাঠানো হবে।

প্রচলিত ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক ইট ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছেন। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে উচ্চ আদালতের রায়েও ব্লক ইট ব্যবহারে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করা হয়। তবে বাস্তবে উল্লেখ করার মতো অগ্রগতি হয়নি।

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইট তৈরির জন্য দেশে প্রায় আট হাজার ভাটা রয়েছে। বিপরীতে ব্লক ইট কারখানা রয়েছে দুই শতাধিক। সাধারণ মানুষ ব্লক ইট সম্পর্কে খুব বেশি জানে না। এ জন্য চোখে পড়ার মতো প্রচারণা নেই। তবে ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়াতে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি খসড়া পথনকশা (রোডম্যাপ) তৈরি করছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) সৈয়দ নাজমুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কাজে ব্লক ইট ব্যবহারের বিষয়ে সম্প্রতি আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। সব সরকারি কাজে ব্লক ইট ব্যবহারের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ব্লক ইট তৈরির কারখানাগুলোর যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সরকারি সংস্থাগুলোর সদিচ্ছা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।