বন্দুক জমা দিয়ে পাখি সংরক্ষণের অঙ্গীকার করলেন শিকারি
রংপুরের কারমাইকেল কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল্লাহ সিদ্দিক একসময় বন্দুক দিয়ে অতিথি পাখি শিকার করতেন। তবে সেটা যে ভুল ছিল, তা স্বীকার করে সম্প্রতি নিজেকে পরিবর্তন করেছেন তিনি। শিকারের বদলে এখন তিনি পাখি সংরক্ষণে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। বন্দুক জমা দিয়ে সে লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছেন।
শহিদুল্লাহ সিদ্দিক বলেছেন, পাখি শিকারের জন্য তিনি অনুতপ্ত। এখন পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে থেকে পাখি রক্ষাই হবে তাঁর কাজ।
তিনি উপলব্ধি করেছেন এভাবে পরিযায়ী পাখি শিকার করা ঠিক হয়নি। অঙ্গীকারের প্রমাণ হিসেবে তিনি বন্দুকটি জমা দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এখন থেকে পাখি সংরক্ষণে কাজ করবেন। ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
যে ঘটনায় পরিবর্তন
১৪ নভেম্বর সকালে রংপুরের তিস্তা নদীর তীরে চারজন পরিবেশকর্মী পাখির ছবি তুলতে গিয়ে পাখিশিকারিদের একটি দল লক্ষ করেন। শিকারিদের নৌকার পিছু নেন তাঁরা। ততক্ষণে শিকারিদের হাতে মারা পড়েছে তিনটি খয়রা চখাচখি ও একটি বক।
পরিবেশকর্মীদের ওই দলে ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ।
তুহিন ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই দিন সকালে তিস্তা নদীতে পাখির ছবি তুলতে গিয়ে পাখিশিকারিদের একটি দল চোখে পড়ে। বিষয়টি বুঝতে পেরে শিকারিদের দলটি নৌকা নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে থাকে। পরে পরিবেশকর্মীরা তাঁদের ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে শিকারিদের পিছু নেয়। একপর্যায়ে শিকারিদের নৌকায় পৌঁছে যান তাঁরা।
তুহিন ওয়াদুদ বলেন, শিকারিদের নৌকায় মৃত তিনটি খয়রা চখাচখি (রাডি শেলডাক) ও একটি বকের পাশাপাশি একটি বন্দুক, চারটি গুলি ও একটি গুলির খোসা পাওয়া যায়। শিকারি দুজনের মধ্যে একজন রংপুর কারমাইকেল কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল্লাহ সিদ্দিক হিসেবে পরিচয় দেন।
এ ঘটনায় শহিদুল্লাহ সিদ্দিক নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত বোধ করেছেন জানিয়ে তুহিন ওয়াদুদ বলেন, তিনি উপলব্ধি করেছেন এভাবে পরিযায়ী পাখি শিকার করা ঠিক হয়নি। অঙ্গীকারের প্রমাণ হিসেবে তিনি বন্দুকটি জমা দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এখন থেকে পাখি সংরক্ষণে কাজ করবেন। ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। পরিবেশকর্মীরা চান, তিনি নিজের অঙ্গীকার রক্ষা করে পাখি সংরক্ষণে ভূমিকা রাখুক।
চখাচখি পাখির দুটি প্রজাতি। একটি খয়রা চখাচখি ও আরেকটি মেথো বা ছোট চখাচখি। প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন খয়রা চখাচখিকে সংখ্যা ও হুমকি বিবেচনায় কম উদ্বেগজনক ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনে পাখিটি সংরক্ষিত।
প্রতিবছর আমি একবার শিকারে বের হই। নদী ঘুরতে ভালো লাগে। সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও থাকে। আমি এ ঘটনায় অনুতপ্ত। এখন পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে থেকে পাখি সংরক্ষণে সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করব।
আর নয় শিকার, এবার পাখি সংরক্ষণের অঙ্গীকার
শহিদুল্লাহ সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, শটগানটা তাঁদের পারিবারিক অস্ত্র। একসময় তাঁর দাদা এটি ব্যবহার করতেন। ২০২২ সালে এটি তাঁর হাতে আসে। এ ঘটনায় অনুতপ্ত হয়ে তিনি শটগানটি বগুড়া অস্ত্রাগারে জমা দিয়েছেন।
শহিদুল্লাহ সিদ্দিক আরও বলেন, ‘প্রতিবছর আমি একবার শিকারে বের হই। নদী ঘুরতে ভালো লাগে। সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও থাকে। আমি এ ঘটনায় অনুতপ্ত। এখন পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে থেকে পাখি সংরক্ষণে সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করব।’
রংপুর সামাজিক বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে তিস্তা নদীর একটি চরে। পুলিশ এ ঘটনায় বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় বন্য প্রাণী নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ আইন-২০১২ অনুযায়ী একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে।
গঙ্গাচড়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ৯৯৯–এ কল পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পাখি শিকারের প্রমাণ পেয়েছেন। পরবর্তী সময়ে রংপুর কারমাইকেল কলেজের ওই শিক্ষক নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তিনি অনুতপ্ত। নিয়ম অনুযায়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
* সংশোধনী: প্রথম শিরোনামে ভুল বার্তা যেতে পারে বিবেচনায় ১১ নভেম্বর রাত ৯টা ৩৬ মিনিটে তা পরিবর্তন করা হলো।