কর্ণফুলী নদী বাঁচাতে সাম্পান শোভাযাত্রা

কর্ণফুলীর ফিরিঙ্গী বাজার ঘাটে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়। শাহ আমানত সেতু ঘুরে আবার সদরঘাটে এসে কর্মসূচি শেষ হয়ছবি: সৌরভ দাশ

কর্ণফুলী নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবিতে ‘সাম্পান শোভাযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীতে শতাধিক সাম্পান ভাসিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সহযোগিতায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমি ও কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি।

বেলা ১১টায় কর্ণফুলীর ফিরিঙ্গী বাজার ঘাটে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়। শাহ আমানত সেতু ঘুরে আবার সদরঘাটে এসে কর্মসূচি শেষ হয়। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক হাকিম আলী। একটি নৌকায় হয় কর্ণফুলী নদী নিয়ে নানা আলোচনা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। প্রধান বক্তা ছিলেন সাম্পান খেলা ও চাঁটগাইয়া সাংস্কৃতিক মেলা উদ্‌যাপন পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী ফরিদ, বিশেষ বক্তা ছিলেন পরিষদের কো-চেয়ারম্যান শাহেদুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন এম এন আইচ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এন সাফা।

এ ছাড়া সভাপতিত্ব করেন কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী। কর্মসূচি উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার বেলা তিনটায় ‘সাম্পান বাইচ’ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া চলছে আঞ্চলিক সংস্কৃতি মেলা।

কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বিভিন্ন নদী আমরা রক্ষা করতে পারিনি বলে নানা সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় লক্ষ করেছি। কর্ণফুলী গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র। কারণ, চট্টগ্রাম হলো দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। আর চট্টগ্রামের প্রাণ কর্ণফুলী নদী। কর্ণফুলী নদী বাঁচাতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নদী রক্ষায় কাজ করতে হবে। যাঁরা এ নদী ব্যবহার করছেন, তাঁদের যেমন দায়িত্ব আছে; ঠিক তেমনিভাবে যাঁরা নদীর আশপাশে বসবাস করছেন, তাঁদেরও নদী বাঁচানোর দায়িত্ব রয়েছে।’ কর্ণফুলী নদী রক্ষায় পুলিশ সহযোগিতা করবে আশ্বাস দিয়ে কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, কর্ণফুলী নদীর বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সে নির্দেশনা বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ পুলিশের সহযোগিতা সব সময় পাবে।

প্রধান বক্তা চৌধুরী ফরিদ বলেন, কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে হবে। কর্ণফুলী হলো দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। অবৈধভাবে কর্ণফুলী নদীর তীর দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কর্ণফুলীর দখল-দূষণ নিয়ে কথা হয় সাম্পানের মাঝিমাল্লাদের সঙ্গে। মো. আবদুর রহিম ও মো. কায়সার নামের দুই মাঝি বলেন, নদীর পানি কালো হয়ে গেছে। দূষণে এ নদীর প্রাণ যায় যায়। এ ছাড়া নদীর তীরে নানা সময়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। নদী না বাঁচলে তাঁদের না খেয়ে থাকতে হবে।

চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর এক গবেষণায় দেখা যায়, অতীতে কালুরঘাট থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর প্রস্থ ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ মিটার। এখন শাহ আমানত সেতু এলাকায় এর প্রস্থ ৫২০ মিটার।