ঢাকার বায়ু আজ ‘দুর্যোগপূর্ণ’, দূষণ থেকে বাঁচতে কী করবেন
আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের সকালে বায়ুদুষণে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রথম। সকাল সাড়ে আটটার দিকে আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ৩৯৪। এ স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বলে ধরা হয়। যে ছয়টি স্তরে দূষণের মাত্রা দেখা হয়, এর মধ্যে এটি সর্বোচ্চ।
শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার বায়ুদূষণ বাড়ে। মোটামুটি অক্টোবর মাসের শেষ দিক থেকেই দূষণ বাড়তে থাকে। জানুয়ারি মাসে দূষণ অনেক বেশি হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তবে এবার এই ফেব্রুয়ারি মাসের অর্ধেকটা চলে গেলেও দূষণ কমছে না।
আইকিউএয়ারের দেওয়া আজকের তালিকায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই (পিএম ২.৫) দূষণের প্রধান উৎস। আজ ঢাকার বাতাসে যতটা এই বস্তুকণা আছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের চেয়ে ৬৮ গুণের বেশি।
বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে।
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে ‘মাঝারি’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়।
দূষণ থেকে বাঁচতে যা করতে হবে
ঢাকার বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে আইকিউএয়ার যে পরামর্শ দিয়েছে, তার মধ্যে আছে, বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। বাইরের দূষণ থেকে বাঁচতে জানালা বন্ধ রাখারও পরামর্শ তাদের। আর বাইরে গিয়ে শরীরচর্চা না করারও পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বায়ুদূষণ বেশি হলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা। তাঁদের মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা মানুষেরা। তাঁদের বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হওয়া দরকার বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।ঢাকার বায়ুদূষণের স্থানীয় উৎসগুলোর মধ্যে আছে যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া, নির্মাণকাজের দূষণ, আশপাশের ইটভাটার ধোয়া।
গতকাল শনিবার ঢাকার স্কোর ছিল ২২৭। গতকালও ঢাকা দূষণে শীর্ষে ছিল।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণত এ সময়টায় বায়ুদূষণ কমার দিকে থাকে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে উল্টোটা। আমরা যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির অনেক অদ্ভুত আচরণ দেখি, ঢাকার বায়ুর অবস্থাও তেমন হয়ে গেছে। কখন এটি বেশি বা কম হচ্ছে, কেন হচ্ছে, তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, এখন ঢাকার দূষণে স্থানীয় উৎসগুলোই বেশি সক্রিয়। সেগুলো না কমাতে পারলে দূষণ কমবে না।
আজ সকালে বিশ্বে বায়ুদূষণে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারতেরই দুই শহর দিল্লি ও মুম্বাই। শহর দুটির স্কোর যথাক্রমে ২৩৭ ও ২৩৩।