শীতের শোভা বাহারি বাঁধাকপি
একটি গাছ যে কতটা কষ্ট সইতে পারে, তাকে কয়েক দিন না দেখলে সেভাবে বুঝতে পারতাম না। যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ শহরে ছেলের বাসায় এসেছি ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। বাসা থেকে রোজই বের হওয়ার সময় টবে লাগানো সে গাছ দুটোকে দেখি। গাছ দুটো বাহারি বাঁধাকপির। একটির রং বেগুনি-সবুজ, অন্যটি ঘিয়ে-সবুজ। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি, হিমাঙ্কের নিচে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, দেখলাম প্রচুর তুষারপাত হচ্ছে, গাছ দুটো সম্পূর্ণ ঢেকে গেছে সেসব তুষারে। আস্ত একটা টব ও গাছ দুটো তুষারচাপা পড়েছে। বড্ড মায়া হলো গাছ দুটোর জন্য।
তিন দিন সেভাবে থাকার পর তুষার সব গলে গেল, এবার শুরু হলো মেঘ আর টিপটিপ বৃষ্টি। তুষার সরে যাওয়ার পরও দেখলাম গাছ দুটো বেশ সতেজ, চারদিকে পাতা ছড়িয়ে যেন ফুলের মতো ফুটে আছে। বৃষ্টিকণা পাতার ওপর পড়ে চকচক করছে কাচের বলের মতো। তীব্র শীত আর তুষারের দাপটে চারপাশের ও বাগানের গাছগুলো প্রায় মৃত, নিষ্পত্র ও বিবর্ণ-বাদামি। নেই চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া ও প্যানজি ফুলের উল্লাস, সে সময় এই একটু সবুজ-সুন্দর যেন সে অভাব পূরণ করে দিল, তাকে অপার্থিব এক ছিন্ন প্রকৃতির মতো মনে হলো।
কপিগোত্রীয় গাছগুলোকে ইংরেজিতে বলে কেল (kale)। এ গাছগুলো শর্ষেগোত্রীয় একজাতীয় বাঁধাকপিগাছ। এসব শোভাময়ী বাঁধাকপিরও আছে অনেক জাত। সুন্দর রং ও পাতার সৌন্দর্যই এদের অহংকার। পাতাগুলো কুঁচকানো বা কোঁকড়ানো। কেন্দ্রস্থল বা ভেতরের অংশ উজ্জ্বল জাতভেদে লাল, বেগুনি, গোলাপি, ল্যাভেন্ডার, নীল, সাদা, ঘিয়ে ইত্যাদি রঙের হয়ে থাকে। বাহারি বাঁধাকপির বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে রয়েছে পিকক কেল, কোরাল প্রিন্স, কামোনে কোরাল কুইন, কালার আপ কেল, চিডোরি কেল ইত্যাদি।
মজার ব্যাপার হলো, যত বেশি ঠান্ডা পড়ে, তত বেশি এদের রূপ খোলে, রং হয় আরও বেশি উজ্জ্বল। তুষারপাতের পর তার রূপ বেশি খোলতাই হয়। বাহারি বাঁধাকপির গাছ মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাতেও বেশ ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে, কিন্তু মোটেই গরম সহ্য করতে পারে না। সব সময় তাই বাগানে ও টবে এদের শীতকালে লাগানো হয়। শীতের পর বসন্তে লাগালে সেসব গাছে ফুল চলে আসে ও দেখতে অসুন্দর দেখায়। হেমন্তে (নভেম্বর-ডিসেম্বরে) লাগালে শীতের মধ্যে গাছগুলো হয় রূপবতী ও শোভাময়ী।
যুক্তরাষ্ট্রে আসার কয়েক দিন আগে, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে গিয়েছিলাম ঢাকায় আগারগাঁওয়ে ত্রিভুজ সড়কদ্বীপে থাকা ফ্যালকন নার্সারিতে। বেগুনি ও সবুজ জাতের বেশ কটি বাহারি বাঁধাকপির চারা দেখলাম বিক্রির উদ্দেশে সাজানো রয়েছে। গত বছর বুয়েটে সোনালী ব্যাংকের সামনে দেখেছিলাম বেশ কটি বাহারি বাঁধাকপির গাছ। এতে মনে হলো, বাহারি বাঁধাকপি এখন আর শুধু আমেরিকা, ইউরোপ, চীন, জাপানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই,Ñছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও অনেক বাগানে, বাড়িতে, ছাদে এখন বাহারি বাঁধাকপি দেখা যাচ্ছে।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক