নীলাচলে মেঘের কাছাকাছি

নীলাচলে মাথার কাছে মেঘ খেলা করে
ছবি: প্রথম আলো

পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে ওপরের দিকে উঠছে গাড়ি। একসময় পৌঁছানো গেল চূড়ায়।

চূড়া থেকে দেখা যায়, ছোট-বড় অনেক পাহাড়সহ পুরো বান্দরবান শহর। পাহাড়গুলোর গায়ে গায়ে ওড়াউড়ি করে মেঘের দল। এ যেন শরতের নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো শুভ্র মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের মিতালি।

পড়ন্ত বিকেলে চূড়ায় দাঁড়ালে মেঘের দল শরীরে শীতল ছোঁয়া লাগিয়ে দেয়। আর সকালে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে কুয়াশা।

এই হচ্ছে বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্র নীলাচলের সৌন্দর্য। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট উঁচুতে নীলাচল অবস্থিত। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র এটি।

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র নীলাচল
ছবি: প্রথম আলো

জেলা প্রশাসন প্রায় দেড় দশক আগে টাইগারপাড়া নামক স্থানে পর্যটনকেন্দ্রটি গড়ে তোলে। শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে সবচেয়ে উঁচু পাহাড় এটি। এখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরও দেখা যায়। আবার মেঘমুক্ত পরিবেশে দেখা মেলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের।

নীলাচলে বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তকালে মাথার কাছে মেঘ খেলা করে।

পর্যটকেরা যাতে নীলাচলের রূপ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য এখানে বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন স্পট করে দেওয়া হয়েছে। রয়েছে দোলনা। পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে সবুজ পরিবেশে আছে বসার স্থান।

ছবি তোলার জন্য বেশ কিছু স্পট রয়েছে। ছবি তোলার জন্য পাওয়া যাবে পেশাদার আলোকচিত্রী।

পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচের দিকে তাকালে দেখা যায়, সবুজ পাহাড় আর গাছপালা। কখনো কুয়াশা, কখনো মেঘের চাদরে ঢেকে যায় পাহাড়।

একেক ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখা দেয় নীলাচল। বর্ষায় সতেজ একটা অনুভূতি তৈরি হয়। যেন সদ্য স্নান সেরে ওঠা ভেজা পাহাড়।

শরতে নীল আকাশে সাদা তুলোর মতো শুভ্র মেঘ ওড়াউড়ি করে। হেমন্ত ও শীতকালে শুষ্ক শীতল কুয়াশা ঢাকা নীলাচল মনে দোলা দিয়ে যায়।

নীলাচলে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নীলাচলে থাকা যায়।

নীলাচলে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা
ছবি: প্রথম আলো

তবে যাঁরা নীলাচলের রিসোর্টে থাকবেন, তাঁরা রাতভর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। বিশেষ করে জোছনা রাতে পাহাড়চূড়ার রূপ নতুন করে ধরা দেয়।

এখানে স্কেপ রিসোর্ট নামে বিশ্রামাগার আছে। গোলাকৃতির এই বিশ্রামাকক্ষ চোখ জুড়ানো। এখানকার কক্ষে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এ জন্য অবশ্য গুনতে হবে কক্ষপ্রতি তিন হাজার টাকা।

পাশাপাশি নীলাচলের যাত্রাপথেও অনেকগুলো বেসরকারি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে।

নীলাচলে একটি নিজস্ব রেস্তোরাঁ রয়েছে। তবে সেটি বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ। এখানে কিছু ঝুপড়ি চা-কফির দোকান আছে। এতে নানা পাহাড়ি ফল পাওয়া যায়।

বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর হাতে তৈরি পণ্য ও পোশাকের দোকান আছে এখানে। দোকান থেকে সংগ্রহ করা যায় পছন্দের হাতের চুড়ি, গয়না, পাহাড়ি থামি, পিণনসহ নানা সামগ্রী।

পাহাড়চূড়ায় ওঠার জন্য গাড়িভাড়া করতে হবে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, জিপ, মাহেন্দ্র, চাঁদের গাড়িসহ নানা গাড়ি রয়েছে বান্দরবান শহরে কিংবা নীলাচলের প্রবেশপথে। ঘণ্টা দু-একের জন্য ভাড়া নিয়ে অপরূপ নীলাচলকে দেখে আসতে পারেন।