সোলার ফেজ-২–এর উদ্বোধন: সৌরশক্তিনির্ভর সেচে খরচ ৩০ শতাংশ কমে

সৌরশক্তিনির্ভর কৃষি সেচের প্রকল্প সোলার (সোলার এনার্জি ফর অ্যাগ্রিকালচারাল রেজিলিয়েন্স) ফেজ-২–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরাছবি: আইডব্লিউএমআইয়ের সৌজন্যে

বাংলাদেশের সেচব্যবস্থা মূলত আমদানি করা ডিজেলের ওপর নির্ভরশীল। সৌর সেচপাম্প শুধু ডিজেল ব্যবহার কমায় না; বরং কৃষকদের সেচ খরচ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমায়। ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ হাজার সৌর সেচপাম্প স্থাপন ও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর অঙ্গীকার আছে সরকারের।

সৌরশক্তিনির্ভর কৃষি সেচের প্রকল্প সোলার (সোলার এনার্জি ফর অ্যাগ্রিকালচারাল রেজিলিয়েন্স) ফেজ-২–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর একটি হোটেলে আজ সোমবার এ অনুষ্ঠান হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় সফলভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে প্রথম পর্যায়ে। এ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হচ্ছে। এটি এখন পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া ও কেনিয়াতেও সম্প্রসারিত হচ্ছে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে। এ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও জলবায়ু সহনশীলতার ভিত্তিতে টেকসই সৌর কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।

আন্তর্জাতিক পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট (আইডব্লিউএমআই) এবং সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো–অপারেশন (এসডিসি) যৌথভাবে আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

কর্মশালায় বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বারিন্দ বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগী, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সোলার প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশে আইডব্লিউএমআই ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) সঙ্গে যৌথভাবে করা গবেষণায় দেখা গেছে, সৌর সেচপাম্প শুধু ডিজেল ব্যবহার কমায় না; বরং কৃষকদের সেচ খরচ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমায়। সময়সাশ্রয়ী ও শ্রমসাশ্রয়ী সেবা প্রদান করে এবং দেরিতে বর্ষা শুরু হলে অতিরিক্ত সেচের সুযোগ সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশ ও ভারতের তুলনামূলক গবেষণায় আইডব্লিউএমআই দেখিয়েছে যে সাধারণ ধারণার বিপরীতে সৌর সেচ সব সময় ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার ঘটায় না। বাংলাদেশে অপারেটর পরিচালিত সৌর পাম্প টেকসই পানি ব্যবহার নিশ্চিত করেছে।

কৃষিখেতে সৌরশক্তি ব্যবহারে এগিয়ে এসেছেন নারীরা
ছবি: আইডব্লিউএমআইয়ের সৌজন্যে

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার করিম বলেন, বাংলাদেশের সৌরচালিত সেচে রূপান্তর একটি পরিচ্ছন্ন, সাশ্রয়ী ও দক্ষ বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। সরকারের হালনাগাদ নীতি ও এনডিসি ৩.০ লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ হাজার সৌর সেচপাম্প স্থাপন ও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো।

আজকের কর্মশালায় সোলারের জ্যেষ্ঠ গবেষক দর্শিনী রবীন্দ্রনাথ বলেন, সোলার ফেজ-২ শুধু ডিজেল পাম্প বদলে সৌর পাম্প স্থাপনের প্রকল্প নয়। এটি কৃষিতে জ্বালানি ব্যবহারের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে। এটি কৃষকদের উপকারে আসে, নির্গমন হ্রাস করে এবং জলবায়ুঝুঁকির বিরুদ্ধে সহনশীলতা তৈরি করে। প্রথম পর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, গাইবান্ধার চর ও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে নারীরা হাতে বহন করা মাইক্রো-সৌর সেচ পাম্প ব্যবহারের মাধ্যমে গৃহস্থালির কাজে সময় বাঁচিয়ে মৎস্য চাষের মতো আয়বর্ধক কাজে যুক্ত হতে পারছেন।

আইডব্লিউএমআইয়ের ভারত ও বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ আলোক সিক্কা বলেন, ‘বাংলাদেশ সৌর সেচ সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দিয়ে জ্বালানি, পানি ও জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে একত্র করার এক বিশেষ সুযোগ তৈরি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, যথাযথ প্রণোদনা ও সুশাসনের মাধ্যমে সৌর সেচ ভূগর্ভস্থ পানির টেকসই ব্যবস্থাপনা ও পানি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে, যা জলবায়ু সহনশীলতার জন্য এক কার্যকর হাতিয়ার।’

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা সৌর অর্থায়ন দ্রুততর করা, আগ্রিভোল্টাইকসের মতো উদ্ভাবনী মডেল সম্প্রসারণ এবং নীতিগত ও সক্ষমতা উন্নয়ন সহায়তার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।