মেলল ডানা তিনটি ছানা

অবমুক্ত করার আগে ছানা তিনটি। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের রতনপুরে
ছবি: রাশেদ বিশ্বাস

গ্রামের পথ ধরে এগিয়ে চলেছে ইট ভাঙার ‘মেশিন গাড়ি’। গাড়িটির ধাক্কায় পাশের একটি সরু গাছ ভেঙে পড়ল। গাছের একটি ডালে থাকা পাখির গোলগাল বাসাটিও ছিঁড়ে পড়ে গেল। বাসাটিতে ছিল পাখির পালক না–গজানো ও চোখ না–ফোটা তিনটি ছানা। গাড়িচালক আতিক হাসান মনে কষ্ট পেলেন খুব। বাসাটি কোনো রকমে ঠিকঠাক করে তার ভেতরেই তিনি রাখলেন ছানাগুলোকে। গাড়ি চালিয়ে দিলেন সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর বাজারের উদ্দেশে।

ওই বাজারের তরুণ ব্যবসায়ী শেখ মোখলেসুর রহমান এসব ছানা লালনপালন করে যে পরে মুক্ত করে দেন, সে খবর আতিক জানেন। রতনপুরে গিয়ে ছানা তিনটি দিতেই মোখলেস বাজার থেকে নতুন একটি মাটির হাঁড়ি ও একগাদা তুলা কিনলেন। তুলা দিয়ে নকল একটি বাসা বানিয়ে বসিয়ে দিলেন হাঁড়ির ভেতরে। ছানা তিনটি নকল বাসায় বসিয়ে তিনি রওনা হলেন গ্রামের বাড়ি তেঘরিয়ার উদ্দেশে। পরম যত্নেœখাওয়ান খুদ, শস্যদানা ও মুড়ি। ড্রপে করে পানি খাওয়ালেন। দিনটি ছিল গত মার্চ মাসের ৮ তারিখ।

এরপর তিনটি ছানার চোখ ফুটল, শরীরে পালক গজাল ও পাখা বড় হতে লাগল। তখন তিনি সেগুলো খাঁচায় রাখলেন। ছানাগুলো নিজেই খেতে শিখল। লাফালাফি করে একসময় ওড়াউড়ি শিখল। ছানাগুলো তখন খাঁচা থেকে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে উড়তে চায়।

গত ২০ জুলাই মোখলেস ফোন করলেন আমাকে। কথা হলো অনেকক্ষণ। তিনি স্থানীয় ওয়াইল্ডলাইফ মিশনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। আমার পরামর্শমতো সাড়ে চার মাস পরে ২১ জুলাই সকালে তিনটি ছানাকে তিনি অবমুক্ত করেন। আনন্দে তখন তিনি কেঁদে ফেলেন। আহ্‌ শান্তি! আনন্দটা তিনি ভাগাভাগি করলেন আমার সঙ্গে। আমি তাঁকে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে বললাম। কাক-চিলের কবলে পড়তে পারে ছানাগুলো। মা-বাবার কাছ থেকে ছানাগুলো তো জীবন চালানোর প্রশিক্ষণ পায়নি। চেনে না খাদ্য ও শত্রু–মিত্র। তবে এ ছানা পাখিগুলো যদি পেয়ে যায় একই প্রজাতির পাখির ঝাঁক, তাহলে অনেক সুবিধা হবে। সম্ভাবনা এমন ছিল যে পাখি তিনটি সন্ধ্যার আগে ফিরে আসবে মোখলেসের বাড়িতে, ঢুকে পড়বে খাঁচায়। এই সম্ভাবনা থাকে সব ধরনের পোষা ছানার ক্ষেত্রে। অবমুক্ত করার আগে পালক বা বুকের সাদা পশমে যদি রং মেখে দেওয়া হতো, তাহলে ওই পাখি তিনটির অবস্থান বোঝা যেত।

অবমুক্ত করা পাখিগুলো ছিল আমাদের দুর্লভ আবাসিক পাখি সাদা–কোমর মুনিয়া। বৈজ্ঞানিক নাম Lonchura striata. দৈর্ঘ্য ১০ সেমি, ওজন ১২ গ্রাম।